পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দিলে। আমি সেটি বগলদাবা করে তরতর করে নীচে নেমে এলুম। দাদাদেরও নজর ছিল মূর্তিটির উপর, কেউ পান নি। তাদের দেখালুম দেখে, তোমর তো পেলে না, আমি কেমন পেয়ে গেছি।’ দাদারা বললেন, ‘হুঃ, ওর ভিতর কী আছে জানিস নে তো ? এই টেবেলটির উপরে চড়ে মূর্তিটি ফেলে দে নীচে, দেখবি আশ্চর্য জিনিস বের হবে এর ভিতর থেকে ’ দাদাদের অবিশ্বাস করতে পারলেম না। মূর্তির ভিতরের আশ্চর্য দেখবার লোভে তাড়াতাড়ি উচু টেবিলটায় উঠে দিলেম কেষ্টকে মাটিতে এক আছাড়। 'আশ্চর্য তো দেখা দিল ন, মাটির পুতুল ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়ল ঘরময়। তখন আমার কান্না, দাদারা হো-হে করে হেসে হাততালি দিয়ে চম্পট । সেই ভিতর দেখার কৌতুহল আজও আমার ঘুচল না। ছবি, তার ভিতরে কী আছে খুজি । মোড়াতুড়িতে খুঁজি, কাঠ-কুটরোতে খুজি । নিজের আর অন্যের মনের ভিতরে খুজি, কি আছে না-আছে । খুঁজি, কিছু পাই না-পাই এইরকম খোজাতেই মজা পাই। হাত আমার তখন ভালো করে পেনসিল ধরতে পারে না, ছবি আঁকা কাকে বলে জানি নে ; কিন্তু ছবি দেখতে ভাবতে শিখি সেই পিসিমার ঘরে বসে । মার ঘরে আমরা ঢুকতে পাই নে । মার ঘর একেবারে আলাদাধরনে সাজানে। মার শোবার ঘর তৈরি হচ্ছে। রাজমিস্তি লেগে গেছে; বাবামশায়ের পছন্দমত মেঝেতে নানা রঙের টালি পাথর বসানো হচ্ছে, আস্তে আস্তে যাই সেখানে। ঠক্ঠাক্, মিস্ত্রির নকশা মিলিয়ে পাথর বসায় ; অবাক হয়ে দেখি । কখনো-বা দু-একটা পাথর চেয়ে আনি । দেখতে দেখতে একদিন ঘর তৈরি হয়ে গেল । বাবামশায় নিজের হাতে সে ঘর সাজালেন । চমৎকার সব পালিশ-করা দামি কাঠের আসবাবপত্র, কাটা কাচের নানারকম ফুলদানি । একটি ফুলদানি মনে পড়ে ঠিক যেন পদ্মকোরকটি— কাচের গোরু-হাতি, কত কী । দেয়ালে দামি দামি অয়েল-পেণ্টিং, চারি দিকে নানা জাতের আর্কিড, সে একেবারে অন্যরকমের সাজানো ঘর। আমার কিন্তু ভালো লাগে বেশি ছোটোপিসিমার ঘরখানিই। বঙ্কিমবাবুর সূর্যমুখীর ঘরের যে বর্ণনা, যেখানে যে জিনিসটি, হুবহু আমার ছোটােপিসিমার ঘরের সঙ্গে মিলে যায়। অত বড়ে বাড়ির মধ্যে আমার শিশুমনকে খুব টানত তেতলার উপর আকাশের •কাছাকাছি ছোটোপিসিমার ঘর । , కs: