পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চলে গেল যেন ধুলোর উপরে আলপন একে দিলে ঝাটা দিয়ে, জলে ঢেউ খেলিয়ে দিলে। রাস্ত কাটানোর আর্টিস্ট, তাকে বলা যেতে পারে। একদিন হল কী, বাড়িরই কে যেন ডেকেছে ছিরুকে। দরোয়ান গেছে ডাকতে। সে ছিল মউজে ; যে মেথরটা হুকুম শুনবে সে তখন তো নেই, ইংরেজি-বুলি-বল আর-একটা মানুষ তার মধ্যে বসে আছে। দরোয়ান যেই-না কাছে গিয়ে তাকে ডাক দিয়েছে অমনি ছিক শুরু করেছে ইংরেজিতে গালাগালি । কিছুতেই আর তাকে থামানো যায় না। তখন দরোয়ানও হিন্দি বুলিতে তেরিমেরি করে যেমন লাঠি তোলা—বাস, সাহেবের অন্তর্ধান। ছিকু মেথরের মধ্যেকার ভেতে বাঙালিটা হঠাৎ ফিরে এসে দরোয়ানজির পায়ে ধরতে চায়, মাপ করে। দরোয়ানজি, ঘাট হয়েছে। ‘আরে, ছুয়ো মং, ছু’য়ে মৎ’ ব’লে দরোয়ান যত পিছোয় ছির তত এগিয়ে আসে । শেষে দরোয়ানের রণে ভঙ্গ দিয়ে পলায়ন, জাত যাবার ভয়ে। ছিক্কর বুদ্ধি দেখে আমরা অবাক । দরোয়ান মেথরে এ প্রহসন প্রায়ই দেখতুম আর হাসতুম। ছিকুর আর-এক কাতির কথা ছোটোপিসেমশায় বলতেন, ‘জানিস ? মল্লিকবাড়িতে বিয়ের মজলিশে গেছি। দেখি শিমলের ধুতিচাদর জুতোমোজা পরে ফিটবাবু সেজে ছিকুট মজলিশের এক দিকে বসে সটকা টানছে, আমাকে দেখেই দে চম্পট ।” বাবুয়ানি কায়দায় দোরস্ত ছিল ছোটো বড়ো খানসামা চাকর পর্যন্ত সবাই জোড়াসাকোর বাড়ির। ভদ্রলোক কেউ বাড়িতে এলে খাতির করে বসাতে জানত। এখন সেরকম চাকরবাকর দুর্লভ। নতুন চাকরর পুরানো চাকরদের হাতে কিরকম ভাবে কায়দাকানুন তরিবত শিখত দেখো । বাবামশায়ের ছোটো বেয়ার মাদ্রাজী। নতুন এসে সে একদিন লুকিয়ে বাবামশায়ের গেলাসে বরফজল খেয়েছে। বুদ্ধর নজরে পড়ে গেছে তার সে বেয়াদবি । বাবুর গেলাসে বরফজল খাওয়া ! বসাও পঞ্চায়েত, দাও দণ্ড । বেচারা কেঁদেই অস্থির । বসল পঞ্চায়েত বেয়ারাদের মহলে । অনেক রাত পর্যন্ত চলল তক্কাতঙ্কি । একটা ভোজের টাকা দিয়ে, মাথা নেড়া করে, টিকি রেখে তবে উদ্ধার পায় সে। এই রীতিমত দণ্ডের টাকাটা কার কাছ থেকে এসেছিল বলতে পার ? বাবামশায়ের কাছেই ছোড়াটা নিজের দোষ স্বীকার করে কেঁদেকেটে এই টাকাটা বার করেছিল। চাকরদের বাবুয়ানি শিক্ষার খরচ বাবুদেরই বহন করতে হত। বুদ্ধ, বেয়ারা ভালোমানুষ হলেও বাবুর জিনিসপত্রের বিষয়ে খুব হুশিয়ার ૨ ૪૭