পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাকোর বাড়ি মাড়োয়ারি ধনীকে বেচে বের হতে হল যেদিন আমার নিজের ছেলেপিলে বউঝি নিয়ে, সেদিন সেই তেঁতুলতলায় মেথরের নাতি নাতনি নাতবউ কেবল তারাই এসে আমায় ঘিরে কান্না জুড়লে । তাদের ওইখানেই জন্ম, ওইখানেই মৃত্যু। দেশ ঘর বলে আর-কিছু নেই। বলে, ‘এখন উপায় কী হবে বাৰু? আমাদের তুলে দিলে কোথায় যাব ? আমি বলি, ‘চল আমার সঙ্গে বরানগরে, সেইখানে তোদের ঘর বেঁধে দেব । তোরা থাকবি, কাজ করবি, যেমন করছিলি এইখানে । সেই পুরোনো কালের তেঁতুলতলার মায়া ছাড়তে পারলে না। আজও সেখানে তার রয়ে গেছে কি না কে জানে । কী মুখের স্থানই ছিল, কী মুখের হাওয়াই বইত ওইটুকথানি জোড়াসাকোর বাড়িতে । ওখানের মায়ায় যে শুধু আমিই পড়েছিলেম তা নয়, চাকরদাসী কর্মচারী ছেলেবুড়ে সবাই । এই একটি কথা বলি, এ থেকেই বুঝে নাও । মনোরঞ্জনবাৰু যশোরের কুটুম্ব। কাছারিতে কাজ করে, বাতে একটি পা পঙ্গু । তেঁতুলতলায় কর্মচারীদের বাসস্থান, তারই একটি ছোট ঘরে তিনি থাকেন। পেনশন হবে-হবে, পড়ল বুড়ে নির্ঘাত রোগে । খবর পেয়ে ছুটি দেখতে বুড়োকে – ছোট ঘর, একটি মাত্র দরজা জাল-দেওয়া, দেয়ালে আর কোনো পথ নেই মে হাওয়া রোদ আসে বুঝলুম বুড়োর দিন ফুরোবে সেইখানেই । কেমন আছ ? একখানা ভালো ঘরে যেখানে হাওয়া রোদ পাও সেই ঘরে যাও ।” ‘আজ্ঞে, বেশ আছি এখানে । দু-এক দিনের মধ্যেই সেরে উঠে কাছারিতে যাব ।’ বলি, বাসাবাড়িটা একবার তদারক করে যাই । ঘুরতে ঘুরতে দেখি, পায়রার খোপের মতো একটিমাত্র ভাঙা দেওয়ালের গায়ে জলবদ্ধ দরজার ধারে মনোরঞ্জনবাবু গোটা গোট অক্ষরে খড়ি দিয়ে লিখে রেখেছেন মনোরঞ্জন কারাগার’। ঘরে এলাম । তার পরদিন শুনি মনোরঞ্জনবাবুর মনোরঞ্জনকারাগারবাস শেষ হয়ে গেছে। কী বস্তু জোড়াসাকোর বাড়ি বুঝে দেখো । কারাগার হলেও সে মনোরঞ্জন । জোড়াসাকোর পারে ধরা মনোরঞ্জন কারাগার’ । R S >