পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তা ঘিরে চলে গেছে একেবারে অন্দরমহলে। বাবামশায় বিকেল হলে মাঝে মাঝে এসে বসেন ফোয়ারার ধারে। ফোয়ারাটির মাঝে একটি কচি ছেলের ধাতুমূর্তি আকাশের দিকে হাত তুলে । উচু হয়ে ফোয়ার থেকে জল পড়ছে, আশে-পাশে পাখিরা গাইছে, ফুলের সুবাস ভেসে আসছে ; তারই মাঝে বাবামশায় ব’সে। মস্ত বড়ে একটা বিল তৈরি হল এক পাশে । যখন কাটা হত দেখতুম মাঝে মাঝে মাটির স্তম্ভ দাড়িয়ে আছে পর পর । শ’য়ে শ’য়ে লোক মাটি কাটছে, ঝুড়িতে করে এনে ফেলছে পাড়ে। সেই ঝিল একদিন ভরে উঠল তলা থেকে ওঠা নতুন জলের লহরে। দলে দলে হাস চরে বেড়ায়। বিলের এক পাড়ে প্রকাণ্ড একটি বট গাছ, তলায় সারস সারসী, ময়ুর ময়ূরী, রুপোলি সোনালি মরাল দলে দলে খেলা করে । তার ও দিকে হরিণবাগান ; পালে পালে হরিণ এক দিক থেকে আর-এক দিকে ছুটে বেড়াচ্ছে । তার ও দিকে মাঠভরা ভেড়ার পাল ; তার পর গেল গোরু, মোষ, ঘোড়া, তার পর হল শাকসবজি তরিতরকারি নানা ফসলের খেত। এই গেল এক দিকের কথা । আর-এক দিকে ফুলের বাগান, বাগানে সুন্দর কুন্দর খাচা । সে কী খাচী, যেন এক-একটি মন্দির ; সোনালি রঙ, তাতে নানা জাতের রঙবেরঙের পাখি, দেশ বিদেশ থেকে আনানো, বাবামশায়ের বড়ো শখের । বাগানের পরে খেলার মাঠ। তার পর আম কাঠাল লিচু পেয়ীরার বন ; তার পর আরো কত, কী, মনেও নেই সব। বাগান তো নয়, একটা তল্লাট। ফ্রেঞ্চ, টেরিটরি থেকে আরম্ভ করে বন্দিবাটির মিলের ঘাট অবধি ছিল সেই বাগানের দৌড় । সেই তল্লাট দু-মাসের মধ্যেই বাবামশায় সাজিয়ে ফেললেন। অনেক মূর্তির ফর্মাশ হল বিলেতে। একটা ব্রোঞ্জের ফোয়ারার অর্ডার দিলেন, পছন্দমত নিজের হাতে একে । পুকুরপাড়ে বোধ হয় বসাবার ইচ্ছে ছিল । ফোয়ারাটি যেন একগোছা ঘাস ; তেমনি রঙ, দূর থেকে দেখলে সত্যিকারের ঘাস বলেই ভ্রম হয়। তখনকার দিনে ইণ্ডিয়ান আট বলে তো কিছু ছিল না, বিলিতি আর্টেরই আদর হত সবখানে। পরে আমরা দেখি টি. টমসনের দোকানে বিলেত থেকে তৈরি হয়ে এসেছে সেই ফোয়ার আর দুটি মানুষপ্রমাণ ক্রীতদাসীর ধাতুমূতি, বাৱামশায়ের ফর্মাশি জিনিস। ইন্টারন্যাশন্যাল একৃজিবিশন হয়, সেখানে তা সাজানো হল। প্রত্যেকটি ঘাসের মুখ দিয়ে ফোয়ারা ९९२