পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ছুটছে তালগাছ সমান উচু হয়ে। ছ হাজার টাকা শুধু সেই ফোয়ারাটির দাম । সেই একজিবিশন থেকে ফোয়ারাটি ও মূর্তিদুটি কোন দেশের এক রাজা কিনে নিলেন । ভালো ভালো ফুলদানি, কাচের ফুলের তোড়, দেখলে তাক লাগে। জ্যাঠামশায় এলেন পলতার বাগানে ; বাবামশায় ঘুরে ঘুরে তাকে সব দেখাতে লাগলেন । দেখতে দেখতে বাবামশায়ের ঘরে এলেন। সেই ঘরে ঢুকে জ্যাঠামশায় বললেন, "বাঃ গুহ, তোমার মালী তো চমৎকার তোড়া বেঁধেছে। যাবার সময়ে আমাকে এমনি একটি তোড়া বেঁধে দিতে বোলে৷ ’ বাবামশায় বললেন, "এ কাচের ফুল বড়দা, তুমি বুঝতে পার নি ? জ্যাঠামশায়ের তখন হো হো করে হাসি, “আমি আচ্ছা ঠকেছি তো। একটুও বুঝতে পারি নি।’ বাবামশায় প্রায়ই কলকাতায় যেতেন, নানারকম জিনিসপত্তর কিনে নিয়ে আসতেন। একদিন এলেন এক বাক হাস নিয়ে, ঠিক যেন চিনেমাটির খেলনার ইসি ; মুঠোর মধ্যে তা পোরা যায়, শাদা ধবধব, করছে। সেই হাসগুলি নিয়ে ছেড়ে দেওয়ালেন ঝিলে ; খেলা করতে থাকবে, সেইখানেই বাসা বাধবে, বাচ্চা পাড়বে জলের কিনারায় ঘাসের ঝোপে। পরদিন ভোরে গেছেন হাসগুলিকে খাওয়াতে ; দেখেন একটি হাসও বেঁচে নেই, ঝিলের জলে রাশ রাশ শাদা শাদা পালক ছেড়া পদ্মের পাগড়ির মতো ভাসছে । ছোটোপিসিম বললেন, “তোর যেমন কাণ্ড, অতটুকু-টুকু হাসগুলোকে এমনি ছেড়ে রাখে ? রাতারাতি শেয়ালে সব খেয়ে গেছে।’ - আর-একবার মনে আছে, বাবামশায় বসে আছেন ফোয়ারার ধারে । অন্দরমহলের সামনে বড়ো বড়ো প্যাকিং বাক্স এসেছে, চাকররা খুলছে হাতুড়ি বাটালি দিয়ে। প্রায়ই নানা জায়গা থেকে এইরকম প্যাকিং বাক্স আসে বাবামশায়ের ফর্মাশি জিনিসে ভরা। তিনি কাছে বসে চাকরদের দিয়ে তা খোলান ; আমার খুব ভালো লাগে দেখতে কী বের হয় বাক্সগুলো থেকে । চাকরদাসীদের এড়িয়ে কখনো কখনো সেখানে গিয়ে দাড়াই। তাঁ, সেদিন বের হল বাক্স থেকে দুটি কাচের ফুলদানি, একটি গোলাপি ডাটার উপর টিউলিপফুল, ফুলে শিশির পড়ছে ফোটা ফোট, দুপাশে দুটি সোনালি পাতা উঠে দু দিকে ছড়িয়ে পড়েছে। মার চুল বাধবার গোল একটি আয়না ছিল, পরে মা সেটি অলকের মাকে দিয়ে দেন। তিনি যতদিন ছিলেন তাতেই মুখ দেখেছেন। এখন সেই আয়নার যা দুর্দশ ; আমার ঘরে এনে রেখে দিয়েছে, তার সামনে চুল আঁচড়াতে যাই, কেমন করে ૨૨૭