পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

করলে মন, আমার ‘কনে সাজানো’ ছবিখানিতে তার অনেকখানি পাবে। সুখের-স্বপ্ন-ভাঙানো যে দাহ সেও বঞ্চিত ছিল মনে অনেক দিন আগে থেকে। স্বখের নীড়ে বালা করেছিলেম, তবেই তো অfকতে শিখে সে মনের সঞ্চয় ধরেছি 'সাজাহানের মৃত্যুশয্যা’ ছবিতে । বাল্যে পুতুল খেলার বয়সের সঞ্চয় এই শেষ বয়সের যাত্রাগানে, লেখায়, টুকিটাকি ইট কাঠ কুডিয়ে পুতুল গড়ায় যে ধরে যাচ্ছি নে তা ভেবে না। সেই বাল্যকাল থেকে মন সঞ্চয় করে এসেছে। তখনই যে সে-সব সঞ্চয়•কাজে লাগাতে পেরেছিলেম তা নয়। ধরা ছিল মনে । কালে কালে সে সঞ্চয় কাজে এল ; আমার লেখার কাজে, ছবি অীকার কাজে, গল্প বলার কাজে, এমনি কত কী কাজে তার ঠিক নেই। এই নিয়মে আমার জীবনযাত্র চলেছে। আমার সঞ্চয়ী মন । সঞ্চয়ী মনের কাজই এই– সঞ্চয় করে চলা, ভালো মন্দ টুকিটাকি কত কী। কাক যেমন অনেক মূল্যবান জিনিস, ভাঙাচোরা অতি বাজে জিনিসও এক বাসায় ধরে দেয়, মন-পাখিটিও আমার ঠিক সেইভাবে সংগ্রহ করে চলে যা-তা। সেই-সব সংগ্রহ তুমি হিসেব করে গুছিয়ে লিখতে চাও লেখো, আমি বলে খালাস । রোজ বেলা তিনটে ছিল মেয়েদের চুলবাধার বেলা । কবিত্ব করে বলতে হলে বলি, প্রসাধনের বেই । আমাদের অন্দর ও রান্নাবাড়ির মাঝে লম্ব ঘরটায় বিছিয়ে দিত দাসীরা চুলবাধার আয়ন মাছর আরো নানা উপকরণ ঠিক সময়ে। মা পিলিমার নিজের নিজের বউ ঝি নিয়ে বসতেন চুল বাধতে । বিবিজি বলে এক গহনাওয়ালী হাজির হত সেই সময়ে— কোন নতুন বউয়ের কানের মুক্তোর ফুল চাই, কোন মেয়ের নাকের নাকছবি চাই, খোপায় সোনারুপোর ফুল চাই, তাই জোগাত। চুড়িওয়ালী এসে ঝুড়ি খুলতেই তুলতুলে হাত সব নিসপিল করত চুড়ি পরতে। ছোটো ছোটো ব্লাংত দেওয়া গালার চুড়ি, কাচের চুড়ি, কত কৌশলে হাতে পরিয়ে দিয়ে চলে যেত সে পয়সা নিয়ে। চুড়ি বেচবার কৌশলও জানত। চুড়ি পরাবার কৌশলও জানত। কোন রঙের পর কোন চুড়ি মানাবে বড়ে চিত্রকরীর মতে বুকত তার হিসেব সেই চুড়িওয়ালী। বেষ্টিমী আসত ঠিক সেই সময়ে ভক্তিতত্ত্বের গান শোনাতে। তোমরা বঙ্কিমবাবুর নভেলে ষে-সব ছবি পাও সে-সব ছবি স্বচক্ষে দেখেছি আমি খুব ছেলেবেলায়। এখনো চুড়িপরানো ছবি আঁকতে २२१ ,