পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দরজি, চীনাম্যান, তারাও এক-একটা টাইপ ; তাই চোখের সামনে স্পষ্ট তাদের দেখতে পাই এখনে। ঈশ্বরবাৰু শিখিয়ে দিয়েছিলেন চীনে ভাষা, ইরেন দে পাগলা, উড়েন দে পাগল, কী সে। ভাবট। বোধ হয়, জুতে এ পায়েও গলাই, ও পায়েও গলাই, দু পায়েই লাগে কষ। চীনাম্যান এলেই আমরা চীনামানকে ঘিরে ঘিরে ওই চীনে ভাষা বলতুম, আর সে হাসত। ঢিলেঢালা পাজাম, কালে চায়নাকোট গায়ে, ঠিক তার মতোই টাক-টিকিতে সেজে এক চীনাম্যানরূপে বেরিয়েছিলুম এমন কৰ্ম আর করব. ন’ প্রহসনে । শ্রীকণ্ঠবাবু আসতেন । এই এখানকার রায়পুর থেকে ষেতেন মাঝে মাঝে কলকাতায় কর্তামশায়ের কাছে । বুড়োর চেহারা মনে আছে, পাক আমটির মত গায়ের রং, জরির টুপি মাথায় । গাইতেন চৌকিতে বসে ‘ব্রহ্মকুপাহি কেবলম্' আর পুণ্যপুঞ্জেন যদি প্রেমধনং কোহপি লভেৎ । আমরাও দুহাত তুলে গাইতুম, “কোহপি লভেৎ কোহপি লভেং’ । সেদিন শুনলুম ৭ই পৌষে ছাতিমতলায় এই গান। শুনেই মনে হল শ্রীকণ্ঠবাবুর মুখে ছেলেবেলায় শেখা গান। ষাট-সত্তর বছর পরে এই গান শুনে মনে পড়ে গেল সেই দক্ষিণের বারান্দায় শ্রীকণ্ঠবাৰু গাইছেন, আমরা নাচছি। ছোট্ট একটি সেতার থাকত সঙ্গে, সেইটি বাজিয়ে আমাদের নাচাতেন । বড় ভালবাসতেন তিনি ছোটো ছেলেদের । কর্তামশায়ের সঙ্গে তার খুব ভাব ছিল । তারই বাড়িতে আসতে মাঝপথে তিনি বিশ্রাম নিতেন ওই ছাতিমতলায় । স্টেশন থেকে পালকি করে এসে এইখানে নেমে বিশ্রাম নিয়ে তবে যেতেন রায়পুর সিংহিদের বাড়ি। বড়ে ভালো লেগেছিল কর্তামশায়ের ছাতিমতলাটি । তাই তিনি এখানে নিজের একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করবার কল্পনা করেছিলেন । এ সমস্তই ছিল তখন শ্রীকণ্ঠবাবুর দখলে । তখনকার দিনে গুরুজনদের মান কী দেখতুম। আমদরবার বসেছে, খবর এল, কালীকৃষ্ণ ঠাকুর পাথুরেঘাট থেকে দেখা করতে আসছেন । শুনে কী ব্যস্ত সবাই । তোল তোল, ছকে কলকে সব তোল, সর। এখান থেকে এ-সব। বাবামশায় ঢুকলেন ঘরে পরিষ্কার জামাকাপড় পরে তৈরি। গুরুজন আসছেন, ভালোমাকুষ সেজে সবাই অপেক্ষা করতে লাগলেন । ছোটো ছেলেদের মতে। গুরুজনকে ভয় করতেন তারা ; গুরুজনরা এলে সমীহ করা, এটা ছিল । Rఠిd