পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

করতে গেলেন, চাকরদের বললে তাঁরাই তো এনে দিতে পারত।” কিন্তু তা হবে না। ছোটো ছেলেকে লজেজুল খেতে যেমন দেয়, অবন কেক খেতে ভালোবাসে, নিজের হাতে এনে দিতে হবে। এমনিই ছোট্টটি করে দেখতেন ওঁরা আমাকে চিরকাল। এখনো এক-একদিন আমি স্বপ্ন দেখি যেন বাবামশায় ফিরে এসেছেন, আর, আমি ছোট বালকটি হয়ে গেছি। একেবারে নিশ্চিন্ত। আনন্দে ভরপুর হয়ে যাই স্বপ্নেতে। এ স্বপ্ন আমি প্রায়ই দেখি। মা পিসিমারা সব বাড়িতে আছেন, আমিও বড়ো এইরকমই আছি, ছেলেগুলে সব ঘরভরতি । বাবামশায় যেন কোথায় গিয়েছিলেন, ফিরে এলেন ; বাড়ি একেবারে জমজমাট, সবাই ব্যস্ত। আমি আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উঠেছি, যাক, নিশ্চিন্ত হওয়া গেল ; বাবামশায় এসেছেন, আর কোনো ভাবনা নেই। কিন্তু বাবা যেন দুদিন বাদেই চলে যাবেন, একটা বৈরাগ্য ভাব । স্বপ্নে তারই বেদন বেজে ওঠে বুকে, ঘুম ভেঙে যায়। আমার বাবা ছিলেন অজাতশত্রু ; কী তার মন, কী তার ব্যবহার । তার কাছে যে-কেউ আসত তাদের আর দুঃখ বলে কিছু থাকত না । এমনিই আনন্দময় তার সান্নিধ্য ছিল । জ্যাঠামশায়ের এলট কবিতা মনে পড়ল। তার এক লাইনেই আমার বাবামশায় আর জ্যোতিকাকামশায়ের চরিত্র ফুটে উঠেছে। জ্যাঠামশায় লিখেছিলেন— ভাতে যথা সত্যহেম মাতে যথা বীর গুণজ্যোতি হরে যথা মনের তিমিয়। এ অতি সত্য কথা । তাদের কাছে এলে মনের সব তিমির দূরে চলে যেত । আনন্দময় করে রাখতেন চার দিক। উৎসব, আনন্দ, প্রাণখোলা হো-হে হাসি, সে যে না শুনেছে বুঝবে না। অমন হাসতেই শুনি নে আর কাউকে । বাবামশায় আর জ্যোতিকাকামশায়ের খুব ভাব ছিল। একসঙ্গে তারা আট স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন । আমি যখন আট স্কুলে যাই, সে রেকর্ড খুঁজে বের করি । বাবামশায়ের মতো বন্ধুভাগ্য এ বাড়ির আর কারে ছিল না। রবিক বন্ধু পেয়েছেন, কিন্তু অবন্ধুও পেয়েছেন ঢের । বাবামশায় দেশ বেড়াতে খুব ভালোবাগতেন। থেকে থেকেই পশ্চিমের দিকে ঘুরে আসতেন। ওঁর খুব প্রিয় জায়গা ছিল অমৃতসর । অমৃতসরে গোল্ডেন টেম্পলের সামনে অনেক ক্ষণ ૨૯:G.