পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘুমোচ্ছে। রেখে দাও যত্ন করে। ইচ্ছে ছিল, আর একটি সবুজ রঙের কাঠি পেলে শুইয়ে দিতুম পাশাপাশি, থাকত দুটিতে বেশ । সেই পান্নার বাতিকের সময়ে আর-একটি লোক এল একদিন, জব্বলপুরে পাওয়া যায় নানারকম পাথর, বহু পুরোনো পোকামাকড় গাছপালা পাথর হয়ে গেছে, সেই-সব নিয়ে। ভারি সুন্দর সুন্দর পাথর সব । তার মধ্যে একটি ছিল, ঠিক গোল নয়, বাদামের মত গড়নটি দেখতে, রঙটি অতি চমৎকার। পছন্দ হল, কিন্তু দাম বেশি চাইল বলে রাখলুম না , লোকটি তার সব পাথর দেখিয়ে পানিক বাদে চলে গেল। বসে আছি বারান্দায় চুপচাপ। সমরদার ছোটো নাতনিট এসে সেখানে খেলা করতে লাগল। দেখছি সে খেলা করছে আর অনবরত মুখ নাড়ছে। বললুম, দেখি তোর মুখে কী ? সে সামনে এসে ই করে জিব মেলে ধরলে। দেখি জিবের উপরে সেই পাথরটি। বললুম, ‘কোথায় পেলি তুই এই পাথর? দে শিগগির বের করে। গিলে ফেললে কী কাণ্ড হবে।’ এখন, সেই লোকটি যাবার সময় সব জিনিস তুলেছে, ভুলে সেই পাথরটিই ফেলে গেছে। সমরদার নাতনি সেটি পেয়ে লজেঞ্জুস ভেবে মুখে পুরে বসে আছে। তাড়াতাড়ি তার মুখ থেকে পাথরটি নিয়ে পকেটে পুরলুম। পরদিনই সেটি আমার আংটিতে বসিয়ে একেবারে আঙলে পরে বসলুম। স্বন্দর পাথরটি, তার গায়ে একটি মৌমাছি দুটি ডানা মেলে বসে আছে, পাথর হয়ে গিয়েছিল। মেয়ের এল ছুটে দেখতে, বললুম, ‘ওরে দেখ, তাজমহল কোথায় লাগে এর কাছে। তাজমহল ? যে মরেছিল সে তো ধুলো হয়ে গেছে কবে । আর প্রকৃতি এই মৌমাছিটিকে কী করে রেখেছে যে, আজও এ ঠিক তেমনিই আছে। রঙও বদলায় নি একটু । কবে কোন লক্ষ লক্ষ বছর আগে বসন্ত এসেছিল এ ধরার বুকে, মৌমাছি ডানাদুটি মেলে খাচ্ছিল ফুলের মধু আকণ্ঠ পুরে, যে রসে ডুবেছিল, সেই রসের কবরে আজও আছে সে তেমনি মগ্ন হয়ে ? আর্টস্কুলে মাঝে মাঝে এক সন্ন্যাসী আসত। চাপরাসিরা ধরে নিয়ে আসত গাছতলা থেকে ক্লাসে মডেল করবার জন্য । আসে, মডেল হয়ে বসে, ছেলেরা আঁকে, ক্লাস শেষ হলে পয়সা নিয়ে চলে যায়। মাঝে মাঝে দেখি সন্ধের দিকে বা সকালে সন্ন্যাসী হাভেলের ফ্ল্যাট থেকে বের হয় । ব্যাপার কী ! হাতেলের মেম বলেন, ‘আর পারি নে অবনবাৰু। কোন এক সাধু জুটেছে, Réd