পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমাদের লোক গেল জিনিস সংগ্রহ করতে ; কোথাও-বা টাকা পাঠানো হল, পার্সেল করে যে-সব জিনিস আসবে তার খরচ বাবদ । কিছুদিন বাদেই নানা জায়গা থেকে ছোটো বড়ো হালকা ভারী প্যাকিং বাক্স আসতে লাগল। সে কী উৎসাহ আমাদের বাক্স খোলার। আমাদের চতুর্দিকে সাজানো প্যাকিং বাক্স ঠাসা, এক-একটা করে খোলা হচ্ছে। দিল্লি থেকে এসেছে সুন্দর সুন্দর পটারি ; কাশ্মীর থেকে নানারকম শাল, হাতের কাজ– তার মধ্যে একটা পুরোনো পেপারম্যাসের উপর কাজ-করা দোয়াতানি ছিল বড়ো সুন্দর, এখন মনে পড়ে ; বড়ে বড়ো কার্পেট, কেষ্টনগরের পুতুল ; বোম্বে থেকে ভীষণ সব ছবি ; লক্ষেীর তাস– বাদশা-বেগমের মিনিয়েচার আঁকা— বেগমবাদশার খেলত ; উড়িষ্যার পট ; আর, গঞ্জাম থেকে এল তিনটি হাতির দাতের মূর্তি— একটি কূর্ম অবতার ; একটি রাধাকৃষ্ণের বিহার, সবাইকে দেখবার মতো নয়, কিন্তু কী চমৎকার মূর্তি, পাক হাতের কাজ। উডরফ দেখেই বললেন, এইরকম আমার একটি চাই। তুমি যে করেই হোক আমায় এই মূর্তিটি করিয়ে দাও, যত টাকা লাগে ভাবনা নেই।’ ডেকে পাঠালুম আচারি মান্টারকে, চমৎকার কাঠের কাজ করত সে । তাকে বললুম, ‘ভালো চন্দনকাঠে তুমি এর দুটি নকল করে দাও। সে কয়েক দিনের মধ্যেই দুটি মৃতি কেটে নিয়ে এল, ঠিক হুবহু সেই মূর্তিটি কপি করে ছেড়ে দিয়েছে। তার একটি উড়ারফকে দিলুম, একটি আমি নিলুম. আর একটি মূর্তি, সেটি বৃষ্ণের। আধহাতমত উচু মূর্তিটি, বাশিটি ধরে আছেন মুখের কাছে ; সে কী ভাব, কী ভঙ্গি, কী বলব তোমায়, মূর্তিটি দেখে আমি অবাক। অদ্ভুত মূর্তি, আইভরির রঙটি পুরোনো হয়ে দেখাচ্ছে যেন পাক সোনা ! সেই মূর্তিটি দেখেই কেন জানি না আমার মনে হল, এর নিশ্চয়ই জুড়ি আছে । এমন স্বন্দর কৃষ্ণের রাধা না থেকে পারে কখনো ? নিশ্চয়ই এই যুগলমূর্তির পুজো হত এক কালে । সেই জোড়ভাঙা রাধাকে আমার চাই। গঞ্জাম থেকে যে বন্ধু এই মূর্তিগুলি পাঠিয়েছিলেন তাকে লিখলুম। তিনি জানালেন, বহুকালের মূর্তিটি, অনেক খোজ করে পেয়েছেন, কিন্তু রাধার সন্ধান জানেন না । যাক, একৃজিবিশন তো হয়ে গেল। কিন্তু মনের খটকা আর যায় না, যাকে পাই খোজ নিই। দিল্লির দরবারেও এই মূর্তি তিনটির একৃজিবিশন হয়েছিল ; ক্যাটালগে ছবি আছে। সবাইকে সেই ছবি দেখাই আর বলি, ‘এর রাধার সন্ধান পেলে আমায় জানাবে।’ ኟዓቖ.