পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রথম যখন টাইক্কান ছবি অঁাকলে সিন্ধের উপরে হালকা কালি দিয়ে, চোখেই পড়ে না। আমাদের মোগল পাশিয়ান ছবির কড়া রঙ দেখে দেখে অভ্যেস ; আর এ দেখি, রঙ নেই, কালি নেই, হালকা একটু ধোয়ার মতো— এ আবার কী ধরনের ছবি। এত আশা করেছিলুম জাপানি আর্টিস্ট আসবে, তাদের কাজ দেখব কী করে তারা ছবি অঁাকে, রঙ দেয়। আর এ দেখি কোথেকে একটু কয়লার টুকরো কুড়িয়ে এনে তাই দিয়ে প্রথম সিস্কে অঁাকলে, তারপর পালক দিয়ে বেশ করে ঝেড়ে তার উপরে একটু হালকা কালি বুলিয়ে দিলে, হয়ে গেল ছবি। মন খারাপ হয়ে গেল। স্বরেনকে বললুম, ও মুরেন, ছবি যে দেখতেই পাচ্ছি নে স্পষ্ট। স্বরেন বললে, ‘পাবে পাবে, দেখতে পাবে, , অভ্যেস হোক আগে। সত্যিই তাই। কিছুদিন বাদে দেখি, দেখার অভ্যেস হয়ে গেল , তাদের ছবি ভালোও লাগতে লাগল। অনেক ছবি এ কেছিল তারা। আমাদের দেবদেবীর ছবি অঁাকবে, বর্ণনা দিতে হত শাস্ত্রমতে । টাইক্কান এ কেছিল সরস্বতী ও কালীর ছবি দুটি ; সরলার মা কিনে নিলেন । আমাদের স্টুডিয়োর জন্যে ছবি আঁকাব, দেয়ালে ছিল মস্ত বড়ে একটা বিলিতি অয়েলপেটিং—সেট। রাজেন মল্লিককে বিক্রি করে দিলুম। সেই দেওয়ালের মাপে টাইক্কানকে বললুম ছবি একে দিন্তে । রাসলীলা আঁকবে । বললে, ‘বর্ণনা দাও। বর্ণনা দিলুম। এদেশী মেয়েরা কী করে শাড়ি পরে দেখাতে হবে। বাড়ির একটি ছোটো মেরেকে ধরে এনে তাকে মডেল করে দেখালুম, এই করে শাড়ির আঁচল ঘুরে ঘুরে যায়। শাড়ির ঘোরপেচ স্টাডি হল। কোথায় কী গহনা দিতে হবে পুরোনো মূতি, ছবি, ফোটো দেখিয়ে বুঝিয়ে দিলুম। সব হল। এইবার সে মেঝে জুড়ে কাগজ পেতে ছবি আরম্ভ । করলে। প্রথমে কয়লা দিয়ে সিল্কে ড্রইং করে তার পর একট। আসন পেতে চেপে বসল ছবির উপরে। রঙ লাগাতে লাগল একধার থেকে । দেখতে দেখতে কদিনের মধ্যেই ছবি শেষ হয়ে এল। আকাশে চাদের আলো ফুটল, সবই হল, কিন্তু টাইক্কান ছবি আর শেষ করছে না কিছুতেই । বালিগঞ্জের দিকে থাকত, সকালেই চলে আসত, এসেই ছবির উপর ঢাকা দেওয়া কাপড়টি সরিয়ে ছবির দিকে চেয়ে চেয়ে দেখে আর কেবলই এ দিকে , ও দিকে ঘাড় নাড়ে, কী যেন মনের মতে হয় নি এখনো। রোজই দেখি এই ভাব । ՀԵ-Ջ