পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৩০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কোনো জায়গার ডেকোরেশন হবে। সেইটি নন্দলালকে দিয়ে বললুম, এটিই টাইকানকে দিয়ে আমার নাম করে। এক দিকে আংটার মতো আছে, বেশ ছবি টাঙাতে পারবে। আর তার স্ত্রীর জন্য দিলুম আমাদের দেশের শাড়ি ও জামার কাপড় কিছু। পরে নন্দলাল যখন ফিরে এল তার কাছে শুনি, টাইকান সেই ব্রোঞ্জটি হাতে নিয়ে মহা খুশি, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে আর হাসে । ওকাকুরা যখন প্রথমবার আসেন এ দেশে, যতদূর মনে পড়ে কালকাতায় স্বরেনের বাড়িতেই ছিলেন। সেবার খুব বেশি আলাপ হয় নি তার সঙ্গে । মাঝে মাঝে যে তুম, দেখতুম বসে আছেন তিনি একটা কোঁচে। সামনে ব্রোঞ্জের একটি পদ্মফুল, তার ভিতরে সিগারেট গোজা ; একটি করে তুলছেন আর ধরাচ্ছেন। বেশি কথা তিনি কখনোই বলতেন না । বেঁটেখাটে। মানুষটি, সুন্দর চেহারা, টানা চোখ, ধ্যাননিবিষ্ট গম্ভীর মূতি। বসে থাকতেন ঠিক যেন এক মহাপুরুষ। রাজভাব প্রকাশ পেত তার চেহারায় । স্বরেনকে খুব পছন্দ করতেন, ওকাকুরা । স্করেন সম্বন্ধে বলতেন : He is fit to be a king. দ্বিতীয়বার যখন এলেন দশ বছর পরে, তখন আমি আর্টের লাইনে ঢুকেছি। প্রায়ই আমাদের জোড়াসাকোর স্টুডিয়োতে বসে শিল্প সম্বন্ধে আলাপ-আলোচনা হত । নন্দলালদের তিনি আর্টের ট্র্যাডিশন অবজার্ভেশন ও ওরিজিনালিটি বুেঝাতেন তিন দেশলাইয়ের কাঠ দিয়ে। দেবতার মতো ভক্তি করত ওকাকুরীকে জাপানির । আমাদের ছিল এক জাপানি মালী। ওকাকুরা এসেছেন শুনে দেখা করবার খুব ইচ্ছে হল তার । স্ট ডিয়োতে বসে আছেন ওকাকুর, নন্দলালের সঙ্গে কথাবার্তা কইছেন, সে এসে দরজার পাশে দূর থেকে উকিঝু কি দিতে লাগল। বললুম, ‘এসো ভিতরে। কিছুতেই আর আসে না, দূরে দাড়িয়েই কাচুমাচু করে। খানিক বাদে ওকাকুরীর নজরে পড়তে তিনি ডান হাতের তর্জনী তুলে ভিতরের দিকে নির্দেশ করলে পর সে হাঁটু মুড়ে সেখান থেকে মাথা ঝু কতে ঝুঁকতে ঘরে এল । ওকাকুরাও দু-একটা কথা জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। সে আবার সেইভাবেই হাটু মুড়ে বেরিয়ে গেল। যতক্ষণ ঘরে ছিল সোজা হয়ে দাড়ায় নি। পরে তাকে জিজ্ঞেস করলুম, “তুমি ওভাবে ছিলে কেন ? সে বললে, “বাবা! আমাদের দেশে ওঁর কাছে যাওয়া কি সহজ কথা ? আমাদের কাছে উনি যে দেবতার মতো !’ - - . - ૨brઉt