হোমউডের বাড়িতে, আমার উপরেছিল নিমন্ত্রণ করার ভার। নিবেদিতাকেও পাঠিয়েছিলুম নিমন্ত্রণ-চিঠি একটি। পার্টি শুরু হয়ে গেছে। একটু দেরি করেই এসেছিলেন তিনি। বড়ে বড়ে রাজারাজড় সাহেব-মেম গিস গিস করছে । অভিজাতবংশের বড়ঘরের মেম সব ; কত তাদের সাজসজ্জার বাহার, চুল বঁধিবারই কত কায়দা ; নামকরা স্বন্দরী অনেক সেখানে । তাদের সৌন্দর্যে ফ্যাসানে চার দিক ঝলমল করছে। হাসি গল্প গানে বাজনায় মাৎ । সন্ধে হয়ে এল, এমন সময়ে নিবেদিত এলেন । সেই সাদা সাজ, গলায় রুদ্রাক্ষের মালা, মাথায় চুল ঠিক সোনালি নয়, সোনালি রুপোলিতে মেশানো, উচু করে বাধা । তিনি যখন এসে দাড়ালেন সেখানে, কী বলব যেন নক্ষত্রমণ্ডলীর মধ্যে চন্দ্রোদয় হল । স্বন্দরী মেমর তার কাছে যেন এক নিমেষে প্রভাহীন হয়ে গেল। সাহেবের কানাকানি করতে লাগল। উড়রফ, ৱাণ্ট এসে বললেন, ‘কে এ ? তাদের সঙ্গে নিবেদিতার আলাপ করিয়ে দিলুম। ‘স্বন্দরী স্বন্দরী’ কাকে বুল তোমরা জানি নে। আমার কাছে স্বন্দরীর সেই একটা আদর্শ হয়ে আছে । কাদম্বরীর মহাশ্বেতার বর্ণনা—সেই চন্দ্রমণি দিয়ে গড় মূতি যেন মৃতিমতী হয়ে উঠল। নিবেদিতা মারা যাবার পর একটি ফোটে। গণেন মহারাজকে দিয়ে জোগাড় করেছিলুম, আমার টেবিলের উপর থাকত সেখানি। লর্ড কারমাইকেল, তার মতো আর্টিক্টিক নজর বড়ো কারো ছিল না। আমাদের নজরে নজরে মিল ছিল। আর্টেরই শখ তার। জার্মান-যুদ্ধের ঠিক আগে জাহাজ-বোঝাই তার যা-কিছু ভালো ভালো জিনিস ও আমাদের আঁকা একপ্রস্থ ছবি বিলেত পাঠিয়েছিলেন। সেই জাহাজ গেল ডুবে ভূমধ্যসাগরে । তিনি দুঃখ করেছিলেন, “আমার আসবাবপত্র সব যায় যাক কোন দুঃখ নেই, কিন্তু তোমাদের ছবিগুলো ষে গেল এইটেই বড় দুঃখের কথা । নন্দলাল যখন এসে দুঃখ করলে তাকে স্তোকবাক্য দিয়েছিলুম, ‘ভালোই হয়েছে, এতে দুঃখ কী। আমি দেখছি জলদেবীরা আমাদের ছবিগুলো বরুণালয়ে টাঙিয়ে আনন্দ করছেন। গেছে যাক, ভেবে না।’ সেই লর্ড কারমাইকেল একদিন আমার টেবিলের উপর নিবেদিতার ফোটোখানি দেখে ঝুকে পড়লেন ; বললেন, “এ কার ছবি ? বললুল, সিস্টার নিবেদিতার। তিনি বললেন, ‘এ-ই সিস্টার নিবেদিত । আমার একখানি এইরকম ছবি চাই।’ বলেই আর বলা-কওয়া না, সেই ՀնցՆ*