পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৩১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বলে নীচে বৈকুণ্ঠবাৰু নাম সই করলেন। উইল তৈরি। কিছুদিন বাজে ডাবির খেলা শুরু হল । রোজই কাগজ দেখি আর বলি, ‘ও বৈকুণ্ঠবাবু, ঘোড়া উঠল ?' জানি যে কিছুই হবে না, তবু রোজই সকলের ওই এক প্রশ্ন। একদিন এইরকম ও বৈকুণ্ঠবাবু, ঘোড়া উঠল প্রশ্ন করতেই বৈকুণ্ঠবাবু চেচিয়ে উঠলেন, ‘ঘোড়া উঠেছে, ঘোড় উঠেছে, ওই দেখুন, সামনে ? চেয়ে দেখি বরানগরের পরামানিক ঘাটের কাছ বরাবর একজোড়া কালে ঘোড়া জল থেকে উঠছে। স্নান করাতে জলে নামিয়েছিল তাদের। অমনি রব উঠে গেল, আমাদের ঘোড় উঠেছে, ঘোড় উঠেছে। গঙ্গাযাত্রীদের কপালে ঘোড়৷ ওই জল থেকেই উঠে রইল শেষ পর্যন্ত । কী দুরন্তপন করেছি তখন মা গঙ্গার বুকে । কত রকমের লোক দেখেছি, কত রকম ক্যারেক্টার সব। একদিন এক সাহেব এসে ঢুকল ষ্টীমারে । গঙ্গাপারের কোন মিলের সাহেব, লম্বাচা ওড়া জোয়ান ছোকরা, হাতে টেনিস ব্যাট, দেখেই মনে হয় সদ্য এসেছে বিলেত থেকে । সাহেব দেখেই তো আমরা যে যার পা ছড়িয়ে গম্ভীর ভাবে বসলুম সবাই, মুখে চুরুট ধরিয়ে। সাহেব ঢুকে এ দিক ও দিক তাকাতেই সেই ডিসপেপটিক উকিল তাড়াতাড়ি তার জায়গা ছেড়ে উঠে দাড়ালেন। সাহেব বসে পড়ল সেখানে। আড়ে আড়ে দেখলুম, এমন রাগ হল সেই উকিলের উপর । সঙ্গে সঙ্গে সাহেবের চাপরাসিও এসে জায়গার জন্য ঠেলাঠেলি করতে লাগল ফাস্ট ক্লাসের টিকিট হাতে নিয়ে— টিকিট আছে তো এখানে সে বসবে না কেন ? অবিনাশ তো উঠল রুপে, ব-লে, ‘ফাস্ট ক্লাসের টিকিট আছে তো নীচে যা, সেখানে কেবিনে বোস গিয়ে— এখানে আমাদের সমান হয়ে বসবি কি ?’ ব'লে জামার হাত । গুটোতে লাগল। দেখি একটা গোলযোগ বাধবার জোগাড়। গোলযোগ শুনে সাহেবও উঠে দাড়িয়েছে, বুঝতে পারছে না কিছু। সাহেবকে বললুম, চাপরাসিকে এখানে ঢুকিয়েছেন কেন,তাকে পিছনে যেতে বলে। বিলিতি সাহেব, এ দেশের হালচাল জানে না, ব্যাপারটা বুঝে চাপরাসিকে পিছনে পাঠিয়ে দিলে। সাহেবটি লোক ছিল ভালো। খানিক বাদে সে নেমে গেল চাপরাসিকে নিয়ে। উকিলকে বললুম, সাহেব তোমায় কা জিজ্ঞেস করছিল হে ? সে বললে, "সাহেব জানতে চাইলে তুমি কে।’ বললুম, নাম দিয়ে দিলে বুঝি ? সে বললে, ‘হ্যা।’ বললুম, বেশ করেছ, এত লোক থাকতে তুমি আমারই নাম দিতে গেলে কেন ? এবার আমার নামে কেস

፰ ግ