পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৩২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমি তোমাকে দিলুম। সাহেব তো লুফে নিলেন। কী খুশি হলেন ! বললেন, ‘আমি এ ছবি গ্যালারিতে রেখে দেব, যত্বে থাকবে চিরকাল।” - এখন আমার মাস্টারি শুরু করার কথা বলি । সাহেব তো তার স্কুলে আমাকে নিয়ে বসালেন। স্বরেন গাঙ্গুলি হল আমার প্রথম ছাত্র। স্বরেনকে সাহেব তাত শেখাবার জন্য বেনারসে পাঠিয়েছিলেন । তাকে আবার ফিরিয়ে এনে আমাকে বললেন, ‘তুমি তোমার ক্লাস শুরু করে। স্বরেন ও আর দু-চারটি ছেলেকে নিয়ে কাজ শুরু করে দিলাম। কিছুকাল বাদে সত্যেন বটব্যাল বলে এনগ্রেভিং ক্লাসের এক ছাত্র একটি ছেলেকে নিয়ে এসে হাজির, বললে, "একে আপনার নিতে হবে। তখন মাস্টার কিনা, গভীর ভাবে মুখ তুলে তাকালুম, দেখি কালোপানী ছোটো একটি ছেলে। বললুম, লেখাপড়া শিখেছ কিছু ? বললে, এনট্রেন্স, এফ-এ পর্যন্ত পড়েছি। আমি বললুম, “দেখি তোমার হাতের কাজ।” একটি ছবি দেখালে—একটি মেয়ে, পাশে হরিণ, লতাপাত গাছগাছড়া ; শকুন্তলা একেছিল । এই আজকালকার ছেলেদের মতন একটু জ্যাঠামি ছিল তাতে। বললুম, এ হবে না, কাল একটি সিদ্ধিদাতা গণেশের ছবি একে এনে ? পরদিন নন্দলাল এল, একটি কাঠিতে ন্যাকড় জড়ানো, সেই ন্যাকড়ার উপরে সিদ্ধিদাতা গণেশের ছবি। বেশ একেছিল প্রভাতভাতুর বর্ণনা দিয়ে। বললুম, সাবাস ! সঙ্গে ওর শ্বশুর—দিব্যি চেহারা ছিল ওর শ্বশুরের—বললেন "ছেলেটিকে আপনার হাতে দিলুম। আমি তাকে বললুম, লেখাপড়া শেখালে বেশি রোজগার করতে পারবে।’ নন্দলাল জবাবে বললে, ‘লেখাপড়া শিখলে তেত্রিশ টাকার বেশি রোজগার হবে না। এতে আমি তার বেশী রোজগার করতে পারব। আমি বললুম, তা হলে আমার আর আপত্তি নেই।’ সেই থেকে নন্দলাল আমার কাছে রয়ে গেল। তখন এক দিকে স্বরেন গাঙ্গুলি এক দিকে নন্দলাল, মাঝখানে আমি বসে কাজ শুরু করে দিলুম। এখন এক পণ্ডিত এসে জুটে গেলেন—চাকরি চাই। আমি বললুম, ‘বেশ, লেগে যান, রোজ আমাদের মহাভারত রামায়ণ পড়ে শোনাবেন।” আমাদের বাল্যকালের পণ্ডিতমশায়, নাম রজনী পণ্ডিত। সেই পণ্ডিত রোজ এসে রামায়ণ মহাভারত শোনাতেন। আর তাই থেকে ছবি জাকতুম। নন্দলাল বললে, ‘কী আঁকব ? আমি বললুম, আঁকো কর্ণের স্থৰ্ষস্তৰ।” ও বিষয়টা আমি চেষ্টা করেছিলুম ঠিক হয় নি। নন্দলাল একে নিয়ে এল। \35 ое