পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৩৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

"ל צ ছেলেবেলায় পুরীর পাণ্ডাঠাকুর আসত বাড়িতে, বছরে একবার, এলেই জগন্নাথ দেখবার ইচ্ছে জাগত মা পিসিমা ছেলেমেয়ে দাসী পাড়াপড়শি সকলেরই মনে । সে যে কী ঔৎসুক্য জগন্নাথ দেখবার ! পাণ্ডাকে ঘিরে বলতে থাকতুম, ও পাণ্ডাঠাকুর, কবে ঠাকুর দেখাবে বলে না। দাসীরা ছএকজন করে বেরিয়েও পড়ত তার সঙ্গে । তার অনেক কাল পরে, বড়ো হয়েছি, ছেলেপিলে নাতিনাতনি হয়েছে, রবিক বাড়ি কিনলেন পুরীতে, বলুও কিনল, আমাদেরও বললেন জমি কিনতে। জগন্নাথ দেখবার ইচ্ছে মারও বরাবর। কিছু জমি কিনে, নীলকুঠির একটা বাড়ি ভেঙে মসলাপাতি পাওয়া গেল খানিকট, হাতেও টাকা এসে পড়ল কয়েক হাজার, তাই দিয়ে বাড়ি তৈরি হল পুরীতে, নাম হল পাথরপুরী’। তখনকার দিনে পুরী যাওয়া ছিল যেন মুসলমানের মক্কা যাওয়া । মা বউ ঝি ছেলেপুলে নিয়ে চললুম পুরীতে জগন্নাথ দৰ্শন করতে। কী উৎসাহ সকলের। মা সারারাত রইলেন জেগে বসে। আমরা শুয়ে আছি যে যার বেঞ্চিতে লম্বা হয়ে। কটক না কোন স্টেশনে উড়ে পালকিবেহারাদের ‘হুম্পা হুয়া হুম্প হুয়া’ কানে আসতেই মা বললেন, ‘ওঠ, ওঠ, এসে পড়েছি এবারে উড়েদের দেশে।’ ধড়মড় করে সব উঠে বসলুম। এমন মজা লাগল সে শব্দ শুনে, মনে হল যেন পুরীর জগন্নাথের সাড়া পাওয়া গেল, জগন্নাথের শব্দদূত । পালকির হুম্প হুয়া’য় বহুকাল আগে পাণ্ডাঠাকুরের শব্দ জ্যান্ত হয়ে আক্রমণ করলে । ট্রেন চলছে হু হু করে, মুখ বাড়িয়ে আছি জানলা দিয়ে , কে আগে মন্দির চুড়ে দেখতে পাই। খানিক যেতে না যেতেই ভোর হয়ে এল, দূরে দেখা দিল জগন্নাথের মন্দিরের চূড়া-দেখে কী আনন্দ। মনে হল, এইরকম কি এর চেয়ে বেশি আনন্দই বুঝি পেয়েছিলেন চৈতন্যদেব, যদিও রেলে যাচ্ছি আমি। তার পর আর-এক আনন্দ সমুদ্র দেখার ! স্টেশনের কাছেই বাড়ি, বাড়িতে এসেই তাড়াতাড়ি বারান্দায় গেলুম। দেখি কী চমৎকার নীল সেদিকটায়, চোখ জুড়িয়ে যায়, আর কী শব্দ, কী হাওয়া–যেন জগন্নাথের শাখ বাজছে। 4 צס\