পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৩৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বললুম, আমায় ধরুন ভালো করে ; জগন্নাথের পা ছুয়ে আসবেন । পাগু। পিদিম নিয়ে ‘বাৰু উচা নিচ, উচা নিচা’ বলে আর এক-এক সিঁড়ি নামে । এই করে করে বেদির কাছে গিয়ে দাড় করিয়ে দিলুম মাকে । জগন্নাথের পা ছোওয়া হল, এবারে প্রদক্ষিণ করতে হবে। প্রদক্ষিণ করা মানে অনেকখানি জায়গা ঘুরে আসা। অন্ধকারে আরসোলাগুলো ফন্ড্রফড় করে উড়ছে, ভয় হতে লাগল মাকে নিয়ে এ কোথায় এলুম। যাক, সব সেরে তো বাইরে এলুম। ম! খুব খুশি । বারে বারে আমার মাথায় হাত দিয়ে আশীৰ্বাদ করতে লাগলেন, “তোরই জন্য আমার জগন্নাথ দৰ্শন হল।’ উড় রফ, ব্লান্ট ও আসতেন, আমাদেরবাড়িতেই উঠতেন এসে কোনারকের বোক ছিল তাদের। কত মজা করেছি পুরীতে শোভনলাল মোহনলালদের নিয়ে। সেদিন ওদের জিজ্ঞেস করলুম, ‘সমুদ্র মনে আছে ? বললে, ‘নেই। কী করে-বা থাকবে, ওরা তখন কতটুকু-টুকু সব । ওদের নিয়ে সমুদ্রের পাড়ে কাকড় ধরতুম, কাকড়ার গর্তে রুটি ফেলে দিতুম। ঝোক গেল সমুদ্রে জাহাজ চালাতে । ম্যানেজারকে লিখে খেলনার একটা বড়ো জাহাজ আনিয়ে তাতে স্বতে বেঁধে পাড়ে নাটাই হাতে আমি বসে রইলুম। চাকরকে বললুম, জাহাজ নিয়ে জলে ছেড়ে দিতে। ইচ্ছে ছিল জাহাজ ঢেউয়ে টেউয়ে ভেসে যাবে, আমিও নাটাইয়ের স্বতে খুলে দেব, পরে আবার টেনে তীরে আনব। কিন্তু সমুদ্রের সঙ্গে পরিচয় হতে দেরি হয়েছিল। চাকর হাটুজলে জাহাজ নিয়ে ছেড়ে দিলে । ওমা, এক ঢেউয়ে খেলার জাহাজ বালুতে বানচাল হয়ে গেল উলটে পড়ে। সমুদ্রে জাহাজ চালাবার শখ সেইখানেই শেষ । একদিন মোহনলাল বললে, “দেখো দেখে দাদামশায়, লাল চাদ উঠেছে।’ চেয়ে দেখি সুর্যোদেয় হচ্ছে। মনে হয় একেবারে মাটি থেকে উঠছে যেন। বলি, ‘হ্যা হ্যা, তাই তো, লাল চাদই তো বটে !’ আমারও অবস্থা তার মতোই। সেদিন ছেলেমামুষের চোখে আমিও দেখলেম লাল চাদ । বুড়ে ছাত্র জুটল এক সেখানে। বেশ তৈরি হয়ে গিয়েছিল কিছু কালের মধ্যেই। পরে পুরীতে আর্টের মাস্টার হয়ে চলে গেল। সাক্ষীগোপালের বাড়ি। একদিন বসে আছি, মাথায় একটা কুড়ি নিয়ে বুড়ো ছাত্র এল দুপুর রৌদ্রে । কী ? না, ‘আমি এনেছি আপনার জন্য।’ ৩১৭