স্থর্য অন্ত গেলেন সমস্ত পাহাড়ের উপর ফাগের রঙ ছড়িয়ে দিয়ে। রাতের আকাশ ঘন নীল হয়ে এল— সন্ধেতারা উকি দিলে কেলুগাছটার পাতার ফাকে। সেই সময়ে ধরলে দূর পাহাড়ে আবার বৈকালিক স্বর ; আরম্ভ হল পাখিদের গান আবার এ পাহাড়ে, ও পাহাড়ে। একটি একটি করে স্বর ধেন ছুড়ে দিচ্ছে, লুফে লুফে নিচ্ছে পরস্পর। এমনি চলল কতক্ষণ । নীল আকাশের সীমা শুভ্র আলোয় ধুয়ে দিয়ে চন্দ্রও উঠলেন, পাখিরাও বন্ধ করলে তাদের বৈকালিক। সে যেন কিন্নরীদের গান, শুনে এসেছি রেজি দুবেলা । গান তো নয়, যেন চন্দ্রস্থর্যকে বন্দনা করত তারা । কোথায় লাগে তোমাদের সংগীতসভার ওস্তাদি সংগীত। মন টলিয়েছিল কিন্নরীর দল । তাই বহুদিন পরে কলকাতায় তারাই সব এক-এক করে ফুটে বের হল আমার একরাশ পাখির ছবিতে। দেখে নিয়ে, তার ভিতরে স্বর আছে কিছু কিছু, যদিও মাটির রঙে সব সুর ধরা পড়ে নি। সে কত পাখি, সব চোখেও দেখি নি, কানে শুনেছি তাদের গান । মন কত ভাবে কত কী সংগ্রহ করে রাখে। সব যে বের হয় তাও নয় ; মনে হয়, হয়তো পূর্বজন্মেরও স্মৃতি থাকে কিছু। তাই তো ভাবি এক-একবার, লোকে যখন বলে পূর্বজন্মের কথা উড়িয়ে দিতে পারি নে। নয়তো সারনাথে আমার ঘর খুজে পেলেম কী করে ? দেখেই মনে হল এ আমার ঘর, এইখানে আমি থাকতুম, পুতুল গড়তুম বেচতুম। সে একবার পুরোনো সারনাথ দেখতে গেছি। শুধু স্তুপাট আছে, মাটির নীচের শহর একটু-একটু খুড়ে বের করছে সবে । তখন সন্ধে হচ্ছে । বরুণ। নদী, একটি শাদা বক ওপার থেকে এ-পারে ফিরে এল। বড়ো শাস্তিপূর্ণ জায়গা। ঘুরে ঘুরে দেখছি। মাটির উপর ছোটে। একটি ঘর, আরো ছোটো তার দরজা। দরজার চৌকাঠের উপর দুটি হাস আঁকা। চৌমাথা, কুয়ে। সামনে একটি, যেন রাস্তার ধারের ঘরখানি। দেখেই মনে হল যেন আমার নিজের ঘর, কোনোকালে ছিলুম। এত তো দেখলুম, কোথাও এমন মনে হয় নি। ঠিক যেন নিজের বাড়ি বলে মনে হল। জোড়ার্সাকোর বাড়িতে ঢুকলে যেমন হয়, ওই ঘরটির সামনে গিয়ে আমার হল তাই। নেলিকে বললুম, ‘ওরে দেখ, দেখ,। এইখানে বসে আমি পুতুল গড়তুম, তারই ७२१