পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৩৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চোখে মনে ঝগড়া —মন বলে, ‘চোখ, তুমি ধরে রাখতে পার না।’ চোখ বলে, নিজের মনকে না বুঝে আমায় দোষে কেন ? মন ধরে রাখে, দরকারমত বের করে দেয়। তাই তো বলি শেষ ছবি আমার এখনো আঁকা হয় নি। আমারও কৌতুহল হয়, কী ছবি হবে সেটা । অঁাকতে হবে, তার মানে মন ধাক্কা দিচ্ছে। আঁকা হলে বলব, এই হল সেই ছবি। তার পর বন্ধ। মন এখন দুয়োর খুলছে, দু-একটা বের করে দিচ্ছে । শুধু কি ছবি ? দেখো ছবি আছে, লেখা আছে, বাজনা ছিল, গলাও ছিল— সাধা হয় নি। কিন্তু এই-যে তিনটে চারটে আর্ট নিয়ে মনটা খেলা করছে, এখনো তার মধ্যে ছবিটা বেশি খেলা করছে। তবে দেখছি প্রত্যেকবার মন যেটা ধরে শেষ পর্যন্ত রস নিংড়ে তবে ছাড়ে, অক্টোপাসের মতো । মন বড়ো ভয়ানক জানোয়ার । অস্বথের পর ডাক্তার বললেন আমায়, ‘সব কাজ বন্ধ করো।’ মহা মুশকিল ! নিয়ে পড়লুম অণুবীক্ষণযন্ত্র। বসে বসে সবকিছু দেখি তা দিয়ে। বই পড়লুম, পোকামাকড় ঘটিলুম, নিজের হাতে প্লেট তৈরি করলুম, কত জানলুম। মন ধরলে আর ছাড়তে চায় না। মোহনলালদের নিয়ে বসে দেখাতুম, তাদের পড়াতুম। সেই সময় এক আশ্চর্য ব্যাপার দেখেছিলেম। ছোট ছোট্ট এই এতটুকু সব কাকড়া পুষেছিলুম বিস্কুটের বাক্সে, সমুদ্রের জল-বালিও দিয়েছিলুম। কাকড়ার নিজেরাই তাতে গর্ত করে বাসা তৈরি করে নিলে। রোজ সকালে সমুদ্রের ধারে র্কাকড়াদের যেমন রুটি খাওয়াই তেমনি তাদেরও খাওয়াই। একদিন একটু জ্যাম দিয়ে এক ফোটা রুটি ফেলে দিয়েছি কাকড়ার বাক্সে। কোথেকে একটা মাছি এরোপ্লেনের মতো শে করে বসল এসে জ্যামমাখানে রুটির টুকরোটির উপর। যেমন বসা, মাছিটার সমান হবে একটা কাকড়া, দৌড়ে এসে আক্রমণ করলে মাছিটাকে। আমার হাতে যন্ত্র। দেখি মাছিতে কাকড়াতে ধ্বস্তাধস্তি লড়াই, যেন রাক্ষসে দানবে যুদ্ধ। কেউ কাউকে ছাড়ছে না। তখন বুঝলুম কী শক্তি ধরে দিয়েছে প্রকৃতি ওইটুকুরই মধ্যে। জার্মান-রাশিয়ান যুদ্ধের চেয়ে কম নয়। শেষে হার হল মাছিটারই। মনও ওইরকম, চোখে দেখি নে তাকে, কিন্তু ওই কাকড়ার মতো ধরলে আর ছাড়বে না । - দেখলুম আর আঁকলুম, আমার ধাতে তা হয় না। অনেকদিন ধরে মনের VDR)