পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৩৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ব্যাপটাইজ ৭৪ খৃঃ অব্দের আগে থেকে দাসীর কোল ছেড়ে, চাকরের হাত ছেড়ে কাঠর না ধরে বাড়ির সব সিড়ি ওঠা-নাম করতে মজবুত হয়ে গেলেম ; কিন্তু তখনো দেখি হাতের পাঁচটা আঙলের নাম জানি নে, ডান হাতে বা হাতে গোলমাল হয়ে যায় ! সেই অবস্থায় একদিন সকালে আমাদের দক্ষিণের বারান্দার সামনে লম্ব ঘরে চায়ের মজলিস করে বসেছে। বেয়ার বাবুচি উদি পরে ফিটফট হয়ে সকাল থেকে দোতলায় হাজির। আমার সেই নীল মখমলের সেকেণ্ডহ্যাণ্ড কোট আর সর্ট প্যাণ্টণ্টার মধ্যে পুরে রামলাল আমাকে ছেড়ে দিয়েছে যতটা পারে চায়ের মজলিস থেকে দূরে। কে জানে সে কে একজন—মনে তার চেহারাও নেই–সাহেবস্থবো গোছের মানুষ, চ খেতে খেতে হঠাৎ আমাকে কাছে যেতে ঈশার করলেন । পরের ঘরে ঢুকতে মান ছিল পূর্বে, কাজেই আমি ধরা পড়েছি দেখে পালাবার মতলবে আছি, এমন সময় রামলাল কানের কাছে চুপিচুপি বললে—‘যাও, ডাকছেন, কিন্তু, দেখে, ধেয়ে না কিছু। সাহস পেলেম, সোজা চলে গেলেম, টেবেলের কাছে যেখানে রুটি বিস্কুট, চায়ের পেয়াল, কাচের প্লেট, তখমঝোলানো বাবুচি আগে থেকে মনকে টানছিল। ভুলে গেছি তখন রামলালের হুকুমের শেষ ভাগটা, ঘরের মধ্যে কী ঘটনা ঘটল তা একটুও মনে নেই। মিনিট কওক পরে একখান মাখন মাখানে পাউরুটি চিবোতে চিবোতে বেরিয়ে আসতেই আড়ালে কেদারদাদার সামনে পড়লেম । ছেলেমাত্রকে কেদারদাদার অভ্যাস ছিল ‘শলা' বলা । তিনি আমার কানটা মলে দিয়ে ফিল্ড ফিল করে বলেন—যাঃ শাল, ব্যাপটাইজ হয়ে গেলি। রামলাল একবার কটমট করে আমার দিকে চেয়ে বলে—‘বলেছিলুম না খেয়ে না কিছু ’ কী যে অন্যায় হয়ে গেছে তা বুঝতে পারি নে ; কেউ স্পষ্ট করেও কিছু বলে না ; দাসীদের কাছে গেলে বলে—‘মাগো খেলি কী করে ? ছোটো বোনের বলে বসে—তুমি খেয়েছ, ছোব না। বড়োপিসি মাকে ধমকে বলেন, ‘ওকে শিখিয়ে দিতে পারো নি ছোটো বউ।’ ૧.૭૯૨