পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৩৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারতীর ছবি ছোটোদের জন্য তখন বাসস্তী-কাগজের দুইখানি পাতায় ‘পূজার স্থলভ-- আদুরে ছেলে গাল ফুলাইয়া ক্রমাগত সাবানের বুদবুদ উড়াইতেছে এই চিত্রটির ছাপ লইয়া বাহির হইত ; আর সবই ছিল বড়োদের জন্য ; ‘বঙ্গদর্শন ভারতী” ‘বামাবোধিনী’ ‘তত্ত্ববোধিনী সবই । অন্তত বিশ বৎসর বয়স হওয়া পর্যন্ত ‘ভারতী'র কাছে আমরা ঘোঁসিতে পারি নাই ;— সে ঘরের আদরিণী কন্যার মতো বড়োদের কাছে কাছেই থাকিত। আমাদের তেতালার উত্তরের ঘরে মায়ের একটা বড়ে কাচের অলিমারি ; তারি সর্বোচ্চ তাকের একটা অংশে ভারতী’ । চৌকির উপর চৌকির সোপান বাহিয়া আমরা অনেকদিন এই আলমারির চালটা পর্যন্ত উঠিয়া গেছি— এবং সেই অজানা রাজত্বের কত সংবাদ, কত টুকিটাকি সংগ্রহ করিয়া দিগ বিজয়ী বীরের মতো দলে ফিরিয়া আসিয়াছি, কিন্তু ওই একখানিমাত্র কাচের আবরণ ভাঙিয়া ভারতীর উপরে হস্তক্ষেপ— এটা কোনোদিন আমার সাহসে কুলায় নাই। লণ্ঠনঘেরা আলোর বাইরে পতঙ্গ যেমনু, আমাদের শিশু-কালটা তেমনি ভারতীর বাইরে বাইরেই ঘুরিয়া মরিয়াছে বলিলেও চলে। * কেবল একটি দিন— বছরে একটিবার মাত্র মা আমাদের হাতে আলমারির চাবি ছাড়িয়া দিতেন— সে ভাদ্র মাসের রৌদ্রোজ্জল একটি প্রভাত। ভারতীকে কাধে তুলিয়া আমরা ছাদের উপর রোদ পোহাইতে চলিতাম। সেইদিন ক্ষণিকের জন্য ভারতী আমাদের কাছে আসিত । আমরা দেখিতাম— সে পদ্মের উপরে পা-খানি রাখিয়া গালে হাত দিয়া স্বরে চাহিয়া আছে –কোলে তার অনাহত বীণা। এই ছবিটি মাত্র— এ ছাড়া তখনকার ভারতীর আর কোনো ছবি আমার মনে আসে না । e V26 b