পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৩৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঠিক করছি কিনা এও বার বার প্রশ্ন হত। ও জায়গাটা ভালো, ওখানে বেড়িয়ে এসো, মস্ত একটা মন্দির দেখবে, ওই ও-দিকে মস্ত একটা রাজার বাড়ি আছে, বুড়ে রাজার মস্ত দাড়ি, সে ছকো খায় ; ও পাশটায় যেয়ে না জায়গা ভালো নয়, রাতে ও পাহাড়টার কাছে বাঘ আসে—এমনি ছোটোছেলের মতো আমায় ডেকে কথাবার্তা । বয়স ভুলিয়ে দেয় এমন আদর, জীবনের ক্লাস্তি মিটিয়ে দেয় এমন বাতাস আর আলোর মধ্যে আমার পিতৃব্য জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি মনে এখনো জড়িয়ে আছে। শাস্তিনিকেতন— সেখানেও এমনি আয়োজন আমার জন্তে— পথ চলতে বয়েসটা ধুলো হয়ে হাওয়াতে উড়ে পালায়, হরিণের বদলে ছুটে আসে হরিণচোখ ছোটো ছোটো ছেলেরা— আমার ছাতা কেড়ে নেয়, লাঠি ধরে -টানাটানি করে, নিয়ে চলে আম-বাগানের মধ্যে দিয়ে শালগাছের-বেড়া-ঘের ছোটো ছোটো ঘরের মধ্যে— সেখানে ছবি আছে, গান আছে, হাসি আছে, গল্প আছে ছেলেতে বুড়োতে নয়— ছেলের সঙ্গে আর-একজনের— স্কুলের ছুটি-পাওয়া ঘরে ফেরতার। মা বসে আছেন সেখানে— ঠিক সময়ে খাবার ঠিক সময়ে স্নান না করলে চাকর ছোটে মাঠের থেকে আমায় ধরে আনতে । শুকনো নদীতে কুড়ি কোড়াব সে কত, চাদ্বনী রাতে ছাতে বসে রূপকথা, তাও শেষ হয় না। ওস্তাদজীকে ধরি, ওস্তাদজী গান গান— অমনি ওস্তাদজী তানুপুরো নিয়ে বসেন, মাস্টারমশায় দরজার পাশ দিয়ে একবার উকি দিয়ে যান, ভয় হয় বুঝি বলে দেবেন । পুরোনো চাকর এসে বলে কর্তাবাবু ডেকেছেন। কাপড়ের ধুলো বেড়ে সেখানে ভালোমানুষটি হয়ে গিয়ে বসতে হয়, বাড়ির খবর দিতে হয়, কে কী করছে কেমন আছে, তন্ন তন্ন খবর, তারপর বউ-ঠাকরুন থালা সাজিয়ে জল খেতে ডাকেন। এর উপরে আবার পাঠশালার গুরুমশাই হয়ে খেলা, সুরুল গায়ে গিয়ে চাষি চাষি খেলা— তরকারি তোলা, ফল পাড়া ! গাছের উপরে ঘর আছে, সেখানে কাঠ- “ বেড়ালের মতে ওঠা-নাম, দাওয়ায় বসে তেপাস্তরের মাঠের দিকে চেয়ে, যেমন ছেলেবেলায়, তেমনি আজও মাঘরে পড়ে থাকা, গুরুপত্নীর ঘরে ঘরে খেয়ে বেড়ানো ! শহর-ছাড়া গ্রাম-ছাড়া রাঙামাটির পথে বাশি বাজছে কোনখানে, খুঁজে খুঁজে বাশিওয়ালাকে গিয়ে ধর । দিক্‌-বিদিক্ বিস্তৃত ৩৭৪,