পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৪১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জ্যাঠামশায়ও তার ওই প্রকাও মস্তিষ্ক থেকে এক স্বর-জার্শনচক্র বের করে ছাপালেন। সা রে গা মা সব তার ভিতর ধরা আছে । যে-কোনো স্বর ধর পড়ে তাতে। জানি নে, কোথায় আছে তা এখন। অনেক তর্কাতর্কি হয়েছিল স্বরলিপি-পদ্ধতি নিয়ে সে সময়ে । সংগীত নিয়ে সবাই মাথা খেলাত তখন । কিন্তু আসল সংগীত কাকে পেল ? পাথুরেঘাটায়ও সংগীতচর্চা হত, আমাদের জোড়াসাকোতেও হত। জোড়াসাকোর সংগীতচর্চায় লাভ হল বাড়ির ছেলেদের। ছেলেদের ভিতর সংগীতের স্বর চুইয়ে পড়ছে। যেমন, বড়ে মেঘ থেকে বৃষ্টি হয়, মাটি ঘাস তার রস টেনে নেয়। তেমনি নিজে নিজের শক্তিমত ছেলেরা তা টেনে নিচ্ছে। পাথুরেঘাটায় যেমন দরবারী সংগীত হয়, এখানে সেভাবে নয়। এখানে দৈনন্দিন জীবনে সুর বাজছে। জ্যোতিকামশায় ওঁর গাইতেন, ছেলেদের মন ভিজল স্বরেতে। রবিকা’র বেল। তাই। তার মন রস গ্রহণ করলে, তারপর কুরের যে ফুল ফুটল তা কালোয়াতী বা আর-কিছুর সঙ্গেই মেলে না। নিত্যকার হাওয়ার মতে যা বুইল, তার ফল রবীন্দ্রসংগীত । এ যেন বসন্তের পাখি, কোথা থেকে স্বর পেলে, কেউ বলতে পারে না । পাথুরেঘাটার ছেলেরাও সংগীত পেয়েছিল কিন্তু তা বুদ্ধির ভিতর দিয়ে। প্রমোদকুমার, গুরুদাস বৈজ্ঞানিকভাবে দেশী স্বরে ‘হারমোনাইজ করবার চেষ্টা করলেন। আর রবিকা’র মনের ভিতরে স্বর ধরল, সেই ভিতর থেকে যা বের হল তাই রবীন্দ্রসংগীত। রবীন্দ্রসংগীতের মহত্বই এখানে। রবিকা'র ভিতরে স্বর স্বতঃস্ফূর্তভাবে ফুটে উঠল। স্বরের যে গভীরতম দিক, তা মনের ভিতরে প্রবেশ করে যা প্রকাশ হল, তাতে আমাদের সবার প্রাণ র্কাদিয়ে দিয়ে গেল । gפ(s\