পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কথা, সকাল থেকে সাজগোজের ধুমধাম পড়ে গেল। সেইদিন প্রথম জানলেম আমার একটা হালকা নীল মখমলের কোট-প্যান্ট আছে। ভারি আনন্দ হল, কিন্তু গায়ে চড়াবামাত্রই কোট-প্যান্ট বুঝিয়ে দিল যে আমার মাপে তাদের কাটা হয়নি। এই অদ্ভুত সাজ পরে আমার চেহারাটা কারে কারো অ্যালবামে এখনো আছে– রোদের বীজ লেগে চোখ দুটে পিটপিট করছে, কাপড়টা ছেড়ে ফেলতে পারলে বাচি এই ভাব । ফোটো তোলা আর বাড়ির প্ল্যান আঁকার কাজ জানতেন বাবামশায়। ড্রইং করার নানা সাজ-সরঞ্জাম, কম্পাস-পেনসিল কত রকমের দেখতেম তার ঘরে । বাবামশায় কাছারির কাজে গেলে তার ঘরে ঢুকে সেগুলো নেড়ে-চেড়ে নিতেম। ঠিক সেই সময় ফার্সি-পড়ানো মুনশী এসে জুটতেন। কথায় কথায় তিনি আলে, বে, পে, তে, জিম— এমনি ফার্সি অক্ষর আমাদের শোনাতে বসতেন । মুনশীর ছ-একটা বয়েৎ এখনো একটু মনে আছে— ‘গুলেস্তামে যাকে হরিয়েক গুলকে দেখা, নানতরি সে রঙ্গ, ন তেরি সে বৃ হ্যায় । আর-একটা বয়েৎ ছিল সেটা ভুলে গেছি কেবল ধ্বনিটা মনে আছে– কবুতর, বা কবুতর বাক বাবাজ । সেকালে ফার্সি-পড়িয়ে হলে কানে শরের কলম আর লুঙ্গি না হলে চলত নু, মাথাও ঢাকা চাই , ঠিক মনে পড়ে না কেমন সাজটা ছিল মুনশীর । ডাক্তারবাবুর আসবার সময় ছিল সকাল ন’টা । অস্থখ থাক বা না থাক, কতকটা সময় বাইরে বসে গল্পগুজব করে তবে অন্যত্র রোগী দেখতেন গিয়ে রোজই । সেখানেও হয়তো এমনি একটা বাধা টাইম ছিল ডাক্তারের জন্তে পান জল তামাক ইত্যাদি নিয়ে আর-এক ডাক্তারসাহেব ছিল বরাদ—তার নাম বেলি– সে রোজ আসত না, কিন্তু যখন আসত তখনই জানতেম বাড়িতে একটা শক্ত রোগ ঢুকেছে। তখন দেখতুম আমাদের নীলমাধববাবুর মুখটা গম্ভীর হয়ে উঠেছে, আর ইংরিজি কথার মাঝে মাঝে থেকে থেকে ‘ওর নাম কি কথাটা অজস্র ব্যবহার করছেন তিনি ; যথা— ‘আই থিংক্‌— ওর নাম কি— ডিজিটলিস অ্যাও কোয়নাইন— ওর নাম কি— ইফ ইউ প্রেফার আই সে ডক্টার কেলি’ ইত্যাদি। সাহেবছাড়া হয়ে নীলমাধববাবু তাকে ডাক্তারই মনে হত না, মনে হত, একেবারে ঘরের মানুষ আর মজার মানুষটি। বাঘমুখে ছড়ি হাতে, গলায় চাদর, বুকে মোটা সোনার চেইন,•ডাক্তারবাবু ভালোমানুষের মতো এসে একখানা 8ፃ