একটা সরু গলি— একধারে দেওয়াল, অন্যধারে কাঠের বেড়া। গলিট পেরিয়ে পেলেম একটা ছাত আর সরু একটা বারান্দা। তারই একপাশে সারি সারি মাটির উকুন গাথা আছে– দুধ জাল দেবার, লুচি ভাজবার স্বতন্ত্র স্বতন্ত্র চুল্লি। এই সরু বারান্দ, সরু গলির শেষে, চার-পাচ ধাপ সিড়ি— অন্ধকার আর ঘোরতর ঘঘর শব্দ-পরিপূর্ণ একটা ছোটাে ঘরে নেমে গেছে। ঘরের মেঝেটা থরথর করে পায়ের তলায় কঁপিছে টের পেলেম । সেখানে দেখলেম একটা দাসী, হাত দু’খানা তার মোট মোটা— গোল দু’খানা পাথর একটার উপর আর-একটা রেখে, একটা হাতল ধরে ক্রমাগত ঘুরিয়ে চলেছে— পাশে তার স্তুপাকার করা সোনামুগ। এই ডাল দিয়ে যে রুটি খাই তা কি তখন জানি ? সে-ঘরটা পেরিয়ে আর-একটা উঠোনের চক-মিলানো বারান্দা । সেখানে পৌছে একটা চেন লোক— অমৃত দাসী— সে একটা শিল আর নোড়ায় ঘষাঘষি করে শব্দ তুলছে ঘটর-ঘটর, এক-মুঠো কী সে শিলের উপরে ছেড়ে দিয়ে খানিক নোড়া ঘষে দিলে ঘটাঘট, অমনি হয়ে গেল লাল রঙের একটা পদার্থ। অমনি হলুদ, সবুজ, শাদ, কত কী রঙ বাটছে বসে বসে সে– কে জানে তখন সেগুলো দিয়ে কালিয়া, পোলাও, মাছের ঝোল, ডাল, অম্বল রঙ করা হয় ভাত খাবার বেগায়। এখান থেকে টালি-খস ফোকলা একটা মেটে সিড়ি ঘুরে ঘুরে ঠাকুর-ঘরের ঠিক দরজায় গিয়ে দাড়ালেম । রামলাল ফল করে চটজুতোটা পা থেকে খুলে নিয়ে বললে— ‘যাও।” ঠাকুর-ঘরের দেওয়ালে শাদ পঙ্খের প্রলেপ ; খাটালে খাটালে ছোটো ছোটে সারি সারি কুলুঙ্গি ; তারই একটাতে তেল-কালি-পড়া পিলস্কজে পিদুম জলছে সকালবেলায়। ঠিক তারই নীচে দেওয়ালের গায়ে, প্রায় মুছে গেছে এমন একটা বস্থধারার ছোপ। ঘরের মেঝেয় একটা শাদ চুন-মাখানে দেলকো, আর আমপাত, ডাব আর সি দুর-মাখানো একটা ঘট । পুজোর সামগ্রী নিয়ে তারই কাছে পুরুত বসে ; আর গায়ে নামাবলি জড়িয়ে হরিনামের মালা হাতে ছোটোপিসিমা । ধূপ-ধুনোর ধোয়ার গন্ধে ভর ঘরের মধ্যেটায় কী আছে দেখার আগেই আমার চোখ জালা করতে থাকল। তার পর কে যে সে মনে নেই, মেঝেতে একটা বড়ো ক লিখে দিলে। রামখড়ি হাতের মুঠোয় ধরে দাগ বুলোলেম– একবার, দুবার, তিনবার। তার পরেই শাখ বাজল, হাতেখড়িও হয়ে গেল । - Q ૨