পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বর্ষাকাল – একটা টিনের ঘরে আমাদের আড্ডা হল । এক মুহুরি টাকা গুণে নিলে । অতটুকু টিনের ঘরে তো মিটিং হতে পারে না । বুপ, ঝুপ, বৃষ্ট পড়ছে— বাইরে সারি সারি রেলগাড়ির নীচে শতরঞ্জি বিছিয়ে বক্তৃত হচ্ছে আর আমি ভাবছি – এই সময়েই যদি ইঞ্জিন এসে মালগাড়ি টানতে শুরু করে তবেই গেছি আর কি। এই ভাবতে ভাবতে একটা কুলি এসে খবর দিলে সত্যিই একটা ইঞ্জিন আসছে । সবাই দুড়দাড় করে উঠে পড়লুম । শ-খানেক টাকা সেই কুলিদের কাছ থেকে পেয়েছিলুম। ভূমিকম্পের বছর সেট, নাটোর গেলুম সবাই মিলে, প্রোভিন্সিয়াল কনফারেন্স হবে । নাটোরে ছিলেন রিসেপশন কমিটির প্রেসিডেণ্ট । সেখানে রবিকাকা প্রস্তাব করলেন, প্রোভিন্সিয়াল কনফারেন্স বাংলা ভাষায় হবে — বুঝবে সবাই । আমরা ছোকরার ছিলুম রবিকাকার দলে । বললুম, হ্যা, এটা হওয়া চাই যে করে হোক। তাই নিয়ে চাইদের সঙ্গে বাধল – তারা কিছুতেই ঘড়ি পাতেন না । চাইরা বললেন, যেমন কংগ্রেসে হয় সব বক্তৃতাটকৃত ইংরেজিতে তেমনই হবে প্রোভিন্সিয়াল কনফারেন্স । প্যাণ্ডেলে গেলুম, এখন যেই বক্ততা দিতে উঠে দাড়ায় আমরা এক সঙ্গে চেচিয়ে উঠি, বাংলা, বাংলা । কাউকে আর মুখ খুলতে দিই না । ইংরেজিতে মুখ খুললেই বাংলা বাংলা’ বলে চেচাই । শেষটায় চাইদের মধ্যে অনেকেই বাগ মানলেন । লালমোহন ঘোষ এমন ঘোরতর সাহেব, তিনি ইংরেজি ছাড়া কখনো বলতেন না বাংলাতে, বাংলা কইবেন এ কেউ বিশ্বাস করতে পারত না – তিনিও শেষে বাংলাতেই উঠে বক্তৃতা করলেন । কী স্থনদর বাংলা বক্তৃতা করলেন তিনি, যেমন ইংরেজিতে চমৎকার বলতে পারতেন বাংলা ভাষায়ও তেমনি । আমন আর শুনি নি কখনো । যাক, আমাদের তো জয়জয়কার । বাংলা ভাষার প্রচলন হল কনফারেন্সে । সেই প্রথম আমরা বাংলা ভাষার জন্য লড়লুম। ভূমিকম্পের যে গল্প বলব তাতে এ-সব কথা আরো খোলস করে শুনবে । আমি আঁকলুম ভারতমাতার ছবি । হাতে অল্পবস্ত্র বরাভয় – এক জাপানি আর্টিস্ট সেটিকে বড়ো করে একটা পতাকা বানিয়ে দিলে। কোথায় যে গেল পরে পতাকাটা, জানি নে। যাক – রবিকাকা গান তৈরি করলেন, দিল্পর উপর ভার পড়ল, সে দলবল নিয়ে সেই পতাকা ঘাড়ে করে সেই গান গেয়ে গেয়ে চোরবাগান ঘুরে চাদ তুলে নিয়ে এল। তখন সব স্বদেশের Tokyo