পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পাঠিয়ে দিতেন। যার ঘরে যা ভালে রান্না হত, একটা তরকারি ওই বাটিতে করে আসত। সব ঘর থেকে যখন তরকারি এল তখন খোজ নিতেন, দেখ, তে মেথরদের বাড়িতে কী রান্না হয়েছে আজ। সেখানে হয়তে কোনোদিন হাসের ডিমের ঝোল, কোনোদিন মাছের ঝোল— তাই এল খানিকটা বাটিতে করে। এই-সব নিয়ে তিনি রোজ মধ্যাহ্নভোজনে বসতেন । এমনি ছিল র্তার রান্ন। আর খাওয়ার শখ। এইরকম সব ভোজনবিলাসী শয়নবিলাসী নানা রকমের লোক ছিল তখনকার কালে । কারে আবার ছিল ঘুড়ি ওড়াবার শখ। কানাই মল্লিকের শখ ছিল ঘুড়ি ওড়াবার। ঘুড়ির সঙ্গে পাচ টাকা দশ টাকার নোট পর পর গেথে দিয়ে ঘুড়ি ওড়াতেন, স্বতোর প্যাচ খেলতেন । এই শখে আবার এমন শক্‌ পেলেন শেষটায়, একদিন যথাসর্বস্ব খুইয়ে বসতে হল র্তাকে। সেই অবস্থায়ই আমরা র্তাকে দেখেছি, আমাদের কুকুরছানাট পাখিটা জোগাড় করে দিতেন । ওই ঘুড়ি ওড়াবার আর-একটা গল্প শুনেছি আমরা ছেলেবেলায়, মহর্ষিদেব, তাকে আমরা কর্তাদাদামশায় বলতুম, তার কাছে। তিনি বলতেন, আমি তখন ডালহৌসি পাহাড়ে যাচ্ছি, তখনকার দিনে তো রেলপথ ছিল না, নোঁকে করেই যেতে হত, ब्रोि ফোর্টের নীচে দিয়ে বোট চলেছে— দেখি কেল্লার বুরুজের উপর দাড়িয়ে দিল্লীর শেষ বাদশা ঘুড়ি ওড়াচ্ছেন। রাজ্য চলে যাচ্ছে, তখনে মনের আনন্দে ঘুড়িই ওড়াচ্ছেন। তার পর মিউটিনির পর আমি কানপুরের কাছে— সামনে সব সশস্ত্র পাহারা— শেষ বাদশাকে বন্দী করে নিয়ে চলেছে ইংরেজরা । তার ঘুড়ি ওড়াবার পাল শেষ হয়েছে । কর্তাদাদামশায়েরও শখ ছিল এক কালে পায়রা পোষার, বাল্যকালে যখন স্কুলে পড়েন। তার ভাগনে ছিলেন ঈশ্বর মুখুজে— তার কাছেই আমরা সেকালের গল্প শুনেছি। এমন চমৎকার করে তিনি গল্প বলতে পারতেন, যেন সেকালটাকে গল্পের ভিতর দিয়ে জীবন্ত করে ধরতেন আমাদের সামনে । সেই ঈশ্বর মুখুজ্জে আর কর্তাদাদামশায় স্কুল থেকে ফেরবার পথে রোজ টিরিটিবাজারে যেতেন, ভালো ভালো পায়রা কিনে এনে পুষতেন। আমাদের ছেলেবেলায় একদিন কী হয়েছিল তার একটা গল্প বলি শোনো, এ আমাদের নিজে চোখে দেখ। কর্তাফাদামশায় তখন বুড়ে হয়ে গেছেন, বোলপুর না পরগনা থেকে ফিরে এসেছেন। বাবা তখন সবে মারা গেছেন, তাই বোধ হয় כף