পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমাদের বাড়িতে এসে সবাইকে একবার দেখেশুনে যাবার ইচ্ছে । বললেন, কুমুদিনী-কাদম্বিনীকে খবর দাও আমি আসছি। খবর এল, কর্তামশায় আসবেন, বাড়িতে হৈ-হৈ রব পড়ে গেল। আমার তখন নয় কি দশ বছর বয়স । আমাদের ভালো কাপড়-জামা পরিয়ে শিখিয়ে পড়িয়ে দাড় করিয়ে দিলেন, যেন কোনোরকম বেয়াদপি দুষ্টুমি না করি । চাকর-বাকররাও সাজপোশাক পরে ফিটফাট, একেবারে কায়দাদোরস্ত। বাড়িঘর ঝাড়পোছ সাজানো-গোছানো হল । আজ কর্তাদাদামশায় আসবেন । সকাল থেকে ঈশ্বরবাবু সঙ্গরি-টদরি পরে এলেন আমাদের বাড়িতে। সত্তর বছরের বুড়ো সেজেগুজে, কানে আবার একটু আতরের ফায়া গুজে তৈরি। নিয়ম ছিল তখনকার দিনে পুজোর সময় ওই-সব সাজ পরার। সকাল থেকে তো ঈশ্বরবাবু এসে বসে আছেন— আমরা বললুম, তুমি আর কেন বসে আছ সেজেগুজে । কর্তাদাদামশায় তোমাকে চিনতেই পারবেন না । তিনি বললেন, হ্যা, চিনতে পারবেন না। ছেলেবেলায় একসঙ্গে স্থলফেরত কত পায়রা কিনেছি, দুজনে পায়রা পুষেছি। আমাকে চিনতে পারবেন না, বললেই হল ! দেখে ভাই, দেখে। আমরা বললুম, তুমিই দেখে নিয়ে, সে ছেলেবেলাকার কথা কি আর উনি মনে করে রেখেছেন। এখন উনি মহর্ষিদেব, পায়রার কথা ভুলে বসে আছেন। কর্তাদাদামশায় তো এলেন । বড়োপিসেমশায়, ছোটোপিসেমশায় দরজার কাছে দাড়িয়েছিলেন। তিনি বললেন, কে, যোগেশ ? নীলকমল ? বেশ বেশ, ভালো তো ? উপরে এলেন কর্তাদাদামশায় । আমরা সব বারান্দার এক পাশে দাড়িয়ে ছিলুম, আস্তে আস্তে এসে ভক্তিভরে পেন্নাম করলুম— জিজ্ঞেস করলেন, এরা কে কে। পিসেমশায়রা পরিচয় করিয়ে দিলেন, এ গগন, এ সমর, এ অবন। সব ছেলেকে কাছে ডেকে মাথায় হাত দিয়ে আশীৰ্বাদ করলেন। একে একে সবাই আসছে, পেন্নাম করছে। দূরে ঈশ্বরবাবুর মুখে কথাটি নেই। হঠাৎ কর্তাদাদামশায়ের নজর পড়ল ঈশ্বরবাবুর উপরে। এই-যে ঈশ্বর— ব’লে দু হাতে তাকে বুকে জাপটে ধরে কোলাকুলি । সে কোলাকুলি আর থামে না। বললেন, মনে আছে ঈশ্বর, আমরা স্কুল পালিয়ে টিরিটিবাজারে পায়রা কিনতে যেভূম, মনে আছে ? আরে, সেই ঈশ্বর তুমি— ব’লে এক বুড়ো আর-এক বুড়োকে কী আলিঙ্গন। অনেক দিন পরে দেখা দুই বাল্যবন্ধুতে, দেখে মনে হল যেন দুই বালকে কথা হচ্ছে Ե, e