পাতা:অভাগীর স্বর্গ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কেড়ে এনে যেন রেখে দেয়-হারামজাদা পালাতে পারে { মুখুয্যে বাড়িতে শ্রাদ্ধের দিন-মাঝে কেবল একটা দিন মাত্র বাকী। সমারোহের আয়োজন গৃহিণীর উপযুক্ত করিয়াই হইতেছে। বৃদ্ধ ঠাকুরদাস নিজে তত্ত্বাবধান করিয়া ফিরিতেছিলেন, কাঙালী আসিয়া তঁহার সম্মুখে দাড়াইল, কহিল, ঠাকুরমশাই আমার মা মরে গেছে । তুই কে ? কি চাস তুই ? আমি কাঙালী । মা বলে গেছে তেনাকে ‘আগুন দিতে ; তা দি গে না । কাছারির ব্যাপারটা ইতিমধ্যেই মুখে মুখে প্রচারিত হইয়া পড়িয়াছিল, একজন কহিল ও বোধ হয় একটা গাছ চায় । এই বলিয়া সে ঘটনাটা প্রকাশ করিয়া কহিল । মুখুয্যে বিস্মিত ও বিরক্ত হইয়া কহিলেন শোন আবদার। আমারই কত কাঠের দরকার-কাল বাদে পরশু কাজ { যা যা এখানে কিছু হবে না-এখানে কিছু হবে না } এই বলিয়া অন্যত্র প্রস্থান করিলেন ; ভট্টাচার্য মহাশয় অদূরে বাসিয়া ফর্দ করিতেছিলেন, তিনি বলিলেন, তোদের জেতে কে কবে। আবার পোড়ায় রে ? যা মুখে একটু নুড়া জ্বেলে দিয়ে নদীর চড়ায় মাটি দে গে। মুখোপাধ্যায় মহাশয়ের বড় ছেলে ব্যস্তসমস্তভাবে এই পথে কোথায় যাইতেছিলেন। তিনি কান খাড়া করিয়া একটু শুনিয়া কহিলেন, দেখাচেন ভট্টাচার্যামশায় সব ব্যাটারাই এখন বামুন-কায়েত হতে চায়। বলিয়া কাজের ঝোঁকে আর কোথায় চলিয়া গেলেন । কঙালী আর প্রার্থনা করিল না । এই ঘণ্টা দুয়েকের অভিজ্ঞতায় সংসারে সে যেন একেবারে বুড়া হইয়া গিয়াছিল। নিঃশব্দে ধীরে ধীরে তাহার মরা মায়ের কাছে গিয়া উপস্থিত হইল । নদীর চরে গর্ত খুড়িয়া অভাগীকে শোয়ান হইল। রাখালের মা ';