পাতা:অভাগীর স্বর্গ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

‘আসি বলিয়া পুনশ্চ বিদায় লইয়া যখন সে ধীরে ধীরে বাহির হইয়া গেল, তখন কণ্ঠস্বরা যেন তাহার অকস্মাৎ আর একরকম শুনাইল । রাত্রিতে শিবচরণ যখন কক্ষে প্রবেশ করিল। তখন হরিলক্ষ্মী চুপ করিয়া শুইয়া ছিল । মেজবৌয়ের শেষের কথাগুলা আর তাহার স্মরণ ছিল না । দেহ অপেক্ষাকৃত সুস্থ, মনও শান্ত প্রসন্ন ছিল। শিবচরণ জিজ্ঞাসা করিল, কেমন আছ বড়বো ? লক্ষ্মী উঠিয়া বসিয়া কহিল, ভাল আছি । শিবচরণ কহিল, সকালেৰ ব্যাপার জান তা ? বাছাধনকে ডাকিয়ে এনে সক্কিলের সামনে এমনি কড়কে দিয়েছি যে জন্মে ভুলবে না। আমি বেলপুরের শিবচরণ ? হাঃ ! হরিলক্ষ্মী ভীত হইয়া কহিল, কাকে গো ? শিবচরণ কহিল, বিপনেকে । ডেকে বলে দিলাম, তোমার পরিবার আমার পরিবারের কাছে জাক কবে "তাকে অপমান করে যায়, এত বড় আস্পর্ধা ! পাজী, নচ্ছাব, ছোটলোকের মেয়ে । তার ন্যাড়া মাথায় ঘোল ঢেলে গাধায় চড়িয়ে গাহে বা বাইবে বার করে দিতে পারি, জানিস ? হরিলক্ষ্মীর রোগক্লিষ্ট মুখ একেবারে ফ্যাকাশে হইয়া গেল,-বল কি গো ? শিবচরণ নিজের বুকে তাল ঠকিয়া সদৰ্পে বলিতে লাগিল, এ গায়ে জজ বল, ম্যাজিস্টট বল, আর দারোগ পুলিশ বল, সব শৰ্মা ! এই শৰ্মা ! মরণ-কাঠি, জীয়ন-কাঠি এই তাতে ! তুমি বল, কাল যদি না বিপনের বৌ এসে তোমার পা টেপে ত আমি লাটু চৌধুরীর ছেলেই নাই ! আমি বিপিনের বধূকে সর্বসমক্ষে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করিবার বিবরণ ও ব্যাখ্যায় লাটু চৌধুবীর ছেলে অ-কথা কু-কথার আর শেষ রাখিল না। আর তাহারই সম্মুখে স্তব্ধ নির্নিমেষ চক্ষুতে চাহিয়া হরিলক্ষ্মীর মনে হইতে লাগিল, ধরিত্রী, দ্বিধা হও! § ව