পাতা:অভাগীর স্বর্গ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেখোনি । শেখা দরকার। তখন কিন্তু গিয়ে হাতে-পায়ে পড়ে না ; প্রত্যুত্তরে মেজবৌ শুধু একটু মুচকিয়া হাসিয়া বলিল, না দিদি, সে ভয় তোমাকে করতে হবে না । । ठिन् । বন্যার চাপে মাটির বঁাধ যখন ভাঙ্গিতে শুরু করে, তখন তাহার অকিঞ্চিৎকর আরম্ভ দেখিয়া মনে করাও যায় না যে অবিশ্রান্ত জলপ্রবাহ এত অল্পকাল মধ্যেই ভাঙ্গনটাকে এমন ভয়াবহ, এমন সুবিশাল করিয়া তুলিবে। ঠিক এমন হইল হরিলক্ষ্মীর । স্বামীর কাছে বিপিন ও তঁহার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগের কথাগুলো যখন তাহার সমাপ্ত হইল, তখন তাহার পরিণাম কল্পনা করিয়া সে নিজেই ভয় পাইল । মিথ্যা বলা তাহার স্বভাবও নহে, বলিতেও তাহার শিক্ষা ও মর্যাদায় বাধে, কিন্তু দুনিবার জলস্রোতের মত যে-সকল বাক্য আপন ঝোঁকেই তাহার মুখ দিয়া ঠেলিয়া বাহির হইয়া আসিল, তাহার অনেকগুলিই যে সত্য নহে, তাহা নিজেই সে চিনিতে পারিল ! অথচ তাহার গতিরোধ করাও যে তাহার সাধ্যের বাহিরে, ইহাও অনুভব করিতে লক্ষ্মীর বাকী রহিল না । শুধু একটা ব্যাপার সে ঠিক এতখানি জানিত না, সে তাহার স্বামীর । স্বভাব। তাহা যেমন নিষ্ঠুর, তেমনই প্রতিহিংসা-পরায়ণ এবং তেমন বর্বর। পীড়ন করিবার কোথায় যে সীমা, সে যেন তাহ জানেই না । আজি শিবচরণ আস্ফালন করিল না, সমস্তটাই শুনিয়া শুধু কহিল, আচ্ছা! মাস-ছিয়েক পরে দেখো । বছর ঘুরবে না, সে ঠিক । অপমান ও লাঞ্ছনার জ্বালা হরিলক্ষ্মীর অন্তরে জ্বলিতেই ছিল । বিপিনের স্ত্রী ভালরূপ শাস্তি ভোগ করে তাহা সে যথার্থই চাহিতেছিল, কিন্তু শিবচরণ বাহিরে চলিয়া গেলে তাহার মুখের এই সামান্য কয়েকটা কথা বার বার মনের মধ্যে আবৃত্তি করিয়া লক্ষ্মী মনের মধ্যে আর স্বস্তি পাইল না । কোথায় যেন কি একটা ভারী খারাপ হইল এমনই তাহার বোধ হইতে লাগিল ।