পাতা:অভাগীর স্বর্গ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সদরে গিয়া শিবচরণ বিপিনকে ডাকাইয়া আনিয়া কহিল, পাঁচ-সাত বছর থেকে তোমাকে বলে আসচি বিপিন, গোয়ালটা তোমার সরাও, শোবার ঘরে আমি আর টিকতে পারিনে, কথাটায় কি তুমি কান দেবে না ঠিক করেছ ? বিপিন বিস্ময়াপন্ন হইয়া কহিল, কৈ, আমি ত একবারও শুনিনি दछri ? শিবচরণ অবলীলাক্রমে কহিল, অন্ততঃ দশবার আমি নিজের মুখেই তোমাকে বলেছি । তোমার স্মরণ না থাকলে ক্ষতি হয় না, এতবড় জমিদারি মাকে শাসন করতে হয়, তার কথা ভুলে গেলে চলে না। সে যাই হোক, তোমার আপনার তা একটা আক্কেল থাকা উচিত যে, পরের জায়গায় নিজের গোয়ালঘর রাখা কতদিন চলে ? কালকেই ওটা সরিয়ে ফেল গে ; আমার আর সুবিধে হবে না, তোমাকে শেষবারের মত জানিয়ে দিলাম । বিপিনের মুখে এমনই কথা বাহির হয় না, অকস্মাৎ এই পরম বিস্ময়কর প্রস্তাবের সম্মুখে সে একেবারে অভিভূত হইয়া পড়িল । তাহার পিতামহর আমল হইতে যে গোয়ালঘরটাকে সে নিজেদের ‘বলিয়া জানে, তাহা অপরের এতবড় মিথ্যা উক্তির সে একটা প্রতিবাদ পযন্ত করিতে পারিল না, নীরবে বাড়ি ফিরিয়া আসিল । তাহার স্ত্রী সমস্ত বিবরণ শুনিয়া কহিল, কিন্তু রাজার আদালত খোলা আছে ত ! বিপিন চুপ করিয়া রহিল। সে যত ভােলমানুষই হউক, এ কথা সে জানিত ইংবাজ রাজার আদালতগুহের সুবৃহৎ দ্বার যত উন্মুক্তই থাক, দারিদ্রের প্রবেশ করিবার পথ। এতটুকু খোলা নাই। হইলও তাঁহাই। পরদিন বড়বাবুর লোক আসিয়া প্রাচীন ও জীর্ণ গোশাল ভাঙ্গিয়া লম্বা প্রাচীর টানিয়া দিল । বিপিন থানায় গিয়া খবর দিয়া আসিল, কিন্তু আশ্চর্য এই যে, শিবচরণের পুরাতন ইটের নূতন প্রাচীর যতক্ষণ না সম্পূর্ণ হইল, ততক্ষণ পর্যন্ত একটা রাঙ্গা পাগড়িও ইহার নিকটে আসিল «ES