পাতা:অভাগীর স্বর্গ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

টুকরা, ঘুত, মধু ধূপ, ধূনা প্রভৃতি উপকরণ সঞ্চিত হইয়াছিল, কাঙালীর মা ছোটজাত, দুলের মেয়ে বলিয়া কাছে যাইতে সাহস পাইল না, তফাতে একটা উঁচু টিপির মধ্যে দাড়াইয়া সমস্ত অন্তোষ্টিক্রিয়া প্রথম হইতে শেষ পর্যন্ত উৎসুক আগ্রহে চোখ মেলিয়া দেখিতে লাগিল । ठ & *iर्थल চিতার পরে যখন শব স্থাপিত করা হইল। তখন তঁহার রাঙ্গা পা-দুখানি দেখিয়া তাহার দু'চক্ষু জুড়াইয়া গেল, ইচ্ছা হইল ছুটিয়া গিয়া একবিন্দু আলতা মুছাইয়া লইয়া মাথায় দেয়। বহুকণ্ঠের হরিধ্বনির সহিত পুত্রহস্তের মন্ত্রপূত অগ্নি যখন সংযোজিত হইল। তখন তাহার চোখ দিয়া ঝরঝর করিয়া জল পড়িতে লাগিল, মনে মনে বারংবার বলিতে লাগিল, ভাগ্যিমানী মা, তুমি সগ্যে যাচ্চো।---আমাকেও আশীৰ্বাদ করে যাও, আমিও যেন এমনি কাঙালীর হাতের আগুনটুকু পাই । ছেলের হাতের আগুন ! সে ত সোজা কথা নয়! স্বামী, পুত্র, কন্যা, নাতি, নাতনী, দাস, দাসী, পরিজন, • • সমস্ত সংসার উজ্জ্বল রাখিয়া এই যে স্বৰ্গারোহণ• • • দেখিয়া তাহার বুক ফুলিয়া ফুলিয়া উঠিতে লাগিল,- “এ সৌভাগ্যের সে যেন আর ইয়াত্তা করিতে পারিল না । সদ্য-প্রজলিত চিতার অজস্র ধুয়া নীল রঙের ছায়া ফেলিয়া ঘুরিয়া ঘুরিয়া আকাশে উঠিতেছিল, কাঙালীর মা ইহারই মধ্যে ছোট একখানি রথের চেহারা যেন স্পষ্ট দেখিতে পাইল। গায়ে তাহার কত না ছবি আঁকা, চুড়ায় তাহার কত না লতাপাতা জড়ানো । ভিতরে কে যেন রসিয়া আছে- ‘মুখ তাহার চেনা যায় না, কিন্তু সিথায় তঁহার সিদুরের রেখা, পদতল-তুটি আলতায় রাঙানো | উধ্ব দৃষ্টি চাহিয়া কাঙালীর মায়ের দুই চোখে অশ্রুর ধারা বহিতেছিল, এমন সময়ে একটি বছর চোদ-পনরর ছেলে তাহার আঁচলে টান দিয়া কহিল, হেথায় তুই দাড়িয়ে আছিস মা, ভাত রাধবি নে ? মা চমকিয়া ফিরিয়া চাহিয়া কহিল, রাধবোখন রে ! হঠাৎ উপরে অঙ্গুলি নির্দেশ করিয়া ব্যগ্রন্বরে কহিল, দ্যাখা দ্বাখ বাবা, বামুন-মা ওই রথে চড়ে সগ্যে যাচ্চে !