পাতা:অভাগীর স্বর্গ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(5Iga লণ্ডন নগরের পঞ্চাশাৎ মাইল উত্তরে কোরেল নামে একটি গ্রামে ক্ষুদ্র স্রোতস্বতীতীরস্থ দুইখানি অট্টালিকা গ্রামের শোভা শতগুণে বধিত করিয়া রাখিয়াছিল। উভয়ের সৌন্দর্ষে একটা সাদৃশ্য থাকিলেও একটি অপরটি অপেক্ষা এত বৃহৎ জমকাল এবং মূল্যবান যে, দেখিলে বোধহয় যেন কোন রাজা তাহার যৌবনের প্রথমাবস্থায় এটি নির্মাণ করাইয়াছিলেন । তাহার পর যত দিন গড়াইয়া পড়িতে লাগিল, সুখসম্পদ পরিব্যাপ্ত আত্মসুখ যেদিন মরণের ছায়াটা সম্মুখে ঈষৎ হেলাইয়া ধরিয়াছিল, সেইদিন হইতে বোধহয় অপরটির নির্মাণকৰ্ম আরম্ভ করাইয়ছিলেন । তাহাই যৌবনে এবং বার্ধক্যে যেরূপ প্রভেদ, এই দুইটি অট্টালিকার মধ্যেও সেইরূপ একটা প্রভেদ লক্ষিত হইত। একটি তঁহার বিলাসভবন, রাজসভা, অপরটা ভঁৰ্তাহার শান্তিনিকেতন, কুঞ্জকানন । একটিতে কত মর্মরপ্রস্তর, কারুকার্য।শোভিত কত ঝরণা, রঞ্জিত পত্রপুষ্পগঠিত কুঞ্জবন।--তাহাব পর তোশাখানা, অশ্বশালা, পশ্বালয় গ্রামের মত চতুর্দিকে ঘেরিয়া আছে, আর ভিতরে কত আসবাব ! কত টেবিল, চেয়ার, পিয়ানো প্রভৃতি বহুমূল্য কার্পেটের উপর দাড়াইয়া আছে-ভিত্তিসংলগ্ন বৃহৎ মুকুরে সে শোভা সহস্রবার প্রতিফলিত হইয়াছে।--তাহার উপর কত রকমেব চিত্র, নানাবিধ ঝাড়লণ্ঠন দেয়ালগিরির মধ্য দিয়া স্ব স্ব সৌন্দর্য শতগুণে বুদ্ধি করিয়া তুলিয়াছে। কিন্তু অপরটিতে অত কিছু নাই । বাইরে শুধু শ্যামল তৃণদল, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পুস্পতরু, লতাবিতান, একঝাড় পিয়ার বৃক্ষ, একদল আঙ্গুরের কুঞ্জবন মধ্যে দুই একটি বসিবার বেঞ্চ ; নদীর ধারে দুই ঝাড় বংশবাটিকা, তন্মধ্যে এই ক্ষুদ্র অট্টালিকাখানি নদীতীর হইতে ঈষৎ দেখা যায় মাত্র !