পাতা:অভাগীর স্বর্গ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নিশ্চয় দুই এক-দিন চুপ করিয়া ঘরের কোণে বসিয়া থাকিস্তাম ' 'এ ক্ষমতাটুকু যদি নাই, তবে রাগ করিলে চলিবে কেন ?" কথাটার সত্যতা সম্বন্ধে মেরির অণুমাত্র সন্দেহ ছিল না, তাই ক্ষুঃ অন্তঃকরণে গাড়িতে বসিয়া ভাবিল-সে ছেলেবেলায় পড়িয়াছিল যে, উদরের উপর নাকি একদিন হাত-পাগুলা বড় চটিয়া গিয়াছিল--কিন্তু ফল বিশেষ তৃপ্তিজনক হয় নাই ! মেরি তাই রাগ করিতে পারিল না । 5{3 দুইটার কিছু পূর্বে যখন মেরির প্রকাণ্ড জুড়ি গাডি প্রাস্তরে আসিয়: উপস্থিত হইল। তখন সমবেত জনমণ্ডলী বিপুল কলরবে কোলাহল করিয়া উঠিল। সে সুন্দরী, সে যুবতী, সে অবিবাহিতা, এবং বিপুল ধনের অধিকারিণী ; মানবের যৌবনরাজ্যে তাহার স্থান অতি উচ্চে , এখানেও বহু মানের আসনটি তাঁহারই জন্য নিদিষ্ট হইয়াছিল। সে আজ পুষ্পমাল্য বিতরণ করিবে । তাহার পরে যে তাহার শিরে জয়মালাটি প্রথম পরাইতে পরিবে জগতে সেই ভাগ্যবানের অদৃষ্ট আজ হিংসা করিবার একমাত্র বস্তু। সওয়ারগণ রক্তবর্ণ পোশাকে সজ্জিত অশ্বপুষ্ঠে উৎসাহের বেগ ও চাঞ্চল্য কষ্টে সংযম করিয়া অপেক্ষা করিতেছিল। দেখিলে বোধ হয় তাহারা যেন পৰ্বতও ভেদ করিতে সক্ষম ; মেরি উপস্থিত হইয়াছে, নিদিষ্ট সময়ও আসিল,- পিস্তলের শব্দে সকলেই ব্যগ্র হইয়া দেখিল অশ্বশ্রেণী প্রাণপণে ছুটিয়া চলিয়াছে । তাহার পর মেরির নিকট আসিয়া তাহারা অশ্ব সংযম করিল, নিমেষের মধ্যে এক একটি পুষ্পমাল্য হাতে লইয়া আবার ঘোড়া দৌড়াইয়া দিল।--মরিবার সময়টুকু পর্যন্ত তাহদের নাই। প্রাণ তাহদের নিকট আজি নিত। স্তু তুচ্ছ-শুধু এক কথা মনে জাগিতেছে, কে সর্বপ্রথমে মেরির হস্তে মালা ফিরাইয়া দিতে পরিবে । প্রতি অঙ্গচালনায় শুধু ঐ এক ভােব ; – মৃত্যু কিংবা সম্মান ! মেরি মনে 8