পাতা:অভাগীর স্বর্গ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ছেলে বিস্ময়ে মুখ তুলিয়া কহিল, কৈ ? ক্ষণকাল নিরীক্ষণ করিয়া শেষে বলিল, তুই ক্ষেপেছিস ? ও ত ধুয়া । রাগ করিয়া কহিল, বেলা দুপুর বাজে, আমার ক্ষিদে পায় না বুঝি ? এবং সঙ্গে সঙ্গে মায়ের চোখে জল লক্ষ্য করিয়া বলিল, বামুনদের গিয়ী মরছে তুই কেন কেঁদে মরিস মা ? কাঙালীর মারা এতক্ষণে হুশি হইল। পরের জন্য শ্মশানে দাড়াইয়া এইভাবে আশ্রষ্টপাত করায় সে মনে মনে লজ্জা পাইল, এমন কি, ছেলের অকল্যাণের আশঙ্কায় মুহুর্তে চােখ মুছিয়া ফেলিয়া একটুখানি হাসিবার চেষ্টা করিয়া বলিল, কঁাদব কিসের জন্যে রে! চােখে ধো লেগেছে বৈ ত নয়। হা-ধো লেগেছে বৈ তা না! তুই কঁাদিতেছিলি! মা আর প্রতিবাদ করিল না। ছেলের হাত ধরিয়া ঘাটে নামিয়া নিজেও সুন্নান করিল, কাঙালীকেও সুন্নান করাইয়া ঘরে ফিরিল-শস্মশান-ও সংকারের শেষটুকু দেখা আর তার ভাগ্যে ঘটিল না। ॥ छृशे ॥ সন্তানের নামকরণকালে পিতামাতার মুঢ়তায় বিধাতাপুরুষ অন্তরীক্ষে থাকিয়া অধিকাংশ সময়ে শুধু হাস্য করিয়াই ক্ষান্ত হন না, তীব্র প্রতিবাদ করেন। তাই তাহদের সমস্ত জীবনটা তাহদের নিজের নামগুলাকেই যেন আমরণ ভ্যাঙচাইয়া চলিতে থাকে। কাঙালীর মার জীবনের ইতিহাস ছোট, কিন্তু সেই ছোট্ট কাঙালজীবনটুকু বিধাতার এই পরিহাসের দায় হইতে অব্যাহতি লাভ করিয়াছিল। তাহাকে জন্ম দিয়া মা মরিয়াছিল, বাপ রাগ করিয়া নাম দিল অভাগী । মা নাই, বাপ নদীতে মাছ ধরিয়া বেড়ায়, তাহার না আছে দিন, না আছে। রাত। তবু যে কি করিয়া ক্ষুদ্র অভাগী একদিন কাঙালীর মা হইতে বাঁচিয়া রহিল। সে এক বিস্ময়ের বস্তু। যাহার সহিত বিবাহ হইল তাহার নাম রসিক বাঘ, বাঘের অন্য বাঘিনী ছিল, ইহাকে লইয়া সে গ্রামান্তরে উঠিয়া গেল, (S