পাতা:অভাগীর স্বর্গ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

করিয়া তুলিতে পারা যায়। কিরূপ আচার-ব্যবহার আরম্ভ করিলে তাহাকে আরও একটু ম্রিয়মাণ করা যাইতে পারে। ইতিমধ্যে আরও দুই-একবার ভোজন উৎসবাদি সমাধা হইয়াছে, ব্যয়বাহুল্য এবং আয়োজনাদির পারিপাট্য দেখিয়া গ্রামের লোক কত সুখ্যাতি করিয়াছে, কিন্তু তাহাতে তাহার মন নাই। মানস-চক্ষে সে শুধু দেখিতে চাহে, এ-সকল কাহিনী শুনিয়। লিওর মুখ কিরূপ বিশুষ্ক এবং পাণ্ডুবর্ণ হইয়াছে, কর্ণে শুনিতে চাহে, লিও কিরূপ ফুলিয়া ফুলিয়া হৃদয়ের যন্ত্রণায় দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলিতেছে। এত অর্থব্যয় বুঝি তাহা হইলে সার্থক হয়। অর্থব্যয়ের কারণ ঐ লিও এবং উদ্দেশ্য তাহার যাতনা বৃদ্ধি করা :-কিন্তু সফলতার কথা কেহ বলে না । এ কথা কাহাকেও জিজ্ঞাসা করা যায় না-কিন্তু এমন কি কেহ নাই, এমন কি কোন সর্বদশী অন্তর্যামী পদার্থ নাই, যাহা এ কথা বলিয়া যাইতে পারে ? মোরি অন্যমনস্কভাবে এই সব ভাবে । কিন্তু যখন মনে হয়, লিও তাহার পুষ্পের মত শুভ্র শান্ত দেহটি লইয়া হৃদয়ের মধ্যে জগতের শক্তি এক করিয়া পৰ্বতের মত দৃঢ় হইয়া আছে, এত সমারোহ, হাট্টগোল তাহার হৃদয়ের দ্বারে আঘাত খাইয়া ঠিকারিয়া পড়িতেছে, ভিতরে একটি ধারও প্রবেশ করিতে পারিতেছে না ; হয়ত বা সোঁ-হািদয়ে জ্বালার পরিবর্তে অবহেলা ও ঘূণার স্থান হইয়াছে, তখন মেরির সমস্ত শিরা, অস্থি, মজ্জা--যাহ কিছু আছে সমস্ত এক সাথে ঝমােঝম করিয়া সুরে-বেসুরে নিতান্ত একটা অবসন্ন হতাশ ছবি চক্ষের উপর দাড় করাইয়া দেয় । উৎসবরাত্রে যখন সকলে ব্যস্তভাবে ঘুরিয়া বেড়াইতেছে, বাটীময় সাড়াশব্দে পূর্ণিত, শিখরে শিখরে উৎসবের সহস্ৰ দীপ দৈত্যরাজার প্রমোদ ভবনের মত শোভা পাইতেছে-হয় তা সে সময়ে মেরি একটু নির্জনে বসিয়া একটা অপরূপ বিষাদচিত্র মনে মনে আঁকিতেছে । ভাবিতেছে, লিও হয়ত এতক্ষণে তাহার নৈশ কার্য শেষ করিয়া শীতল বায়ুর জন্য একটিবার মাত্র জানােলা খুলিয়াছে ; উৎসবের দীপমালা চক্ষে পড়িয়াছে’- কিন্তু নিমেষের জন্য ! নিতান্ত অবজ্ঞাভরে জানালা রুদ্ধ করিয়া পরীক্ষণেই সে নিতান্ত নিশ্চিত মনে আপনার স্নিগ্ধ শয্যাতলটি আশ্রয় করিয়া শুইয়া আছে,-নিদ্রাদেবী পদ্মহস্তে তাহার @叙