পাতা:অভাগীর স্বর্গ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহসা মনে হইল, লোকটিকে যেন সে কোথায় দেখিয়াছে, যেন এ দেবী প্রতিমার সহিত কখন কোন স্বপ্ন রাজ্যে দেখাশুনা হইয়াছিল, একটু বোধ হয় পরিচয় হইয়াছিল, কিন্তু সে আর নাই, দেখাশুনা হইলে হয়ত বা চিনিতে পারা যায়। কিন্তু মুখখানি মনে পড়িতেছে না । প্রাতঃকাল হইতেই সে এ কথা ভাবিতেছিল। এখন সন্ধ্যা হইয়া গিয়াছে, আকাশে চাদ উঠিয়াছে, বাগান ফুলের গন্ধে ভরিয়া উঠিয়াছে।--লিণ্ড তাহার মধ্যে বসিয়া। দুই ফোঁটা অশ্রুর শেষ বিন্দুটি এখনও গণ্ড ছাড়ায় নাই-বুকের উপর হয়ত এইবার পড়িবে। লিও ভূমিতলে লুটাইয়া পড়িয়া কঁাদিয়া বলিল, “ভগবান ! এত পরিশ্রম করিয়া কি শেষে মেরির চিত্র অঙ্কিত করিয়াছি ? দিবানিশির এই গভীর একান্ত চিন্তা, আকাঙ্ক্ষা, বাসনা, আনন্দ, আশা, ভরসা কি সব মেরির পদতলে লুটাইয়া দিয়াছি ? কি করিতে কি করিয়াছি, ভগবান ! লাঞ্ছিত, উৎপীড়িত, অবমানিত-আমাকে কি শেষে মেরির চিরদাস করিয়া দিয়াছ ? হৃদয়, মন, চিন্তাশক্তি, কল্পনাসমস্ত অযাচিত তাহাকে দিয়া আমি কি শূন্যগর্ভ জড় পুতুলের মত হইয়াছি ? সে চাহে না, আমি চাই । সে পদদলিত করিয়া চলিয়া যায়, আমি ধূলার মত পদতল জড়াইয়া আছি। ছুটিয়া আসিয়া লিও -গৃহের দ্বার রুদ্ধ করিয়া দিল । নয়। এক সপ্তাহও অতিবাহিত হয় নাই, মেরি চার্লসকে হঠাৎ বলিল, “তুমি আমার একটা উপকার করিতে পরিবে ? আজি মেরির চক্ষু দুটা কতকটা উন্মাদের মত চকচক করিতেছে। চার্লস কহিল, “কি রকম উপকার ? মেরি একটু থামিয়া বলিল, “তবে শোন, তোমাকে বুঝাইয়া বলি ; -আমার বুকের মাঝখানে একটা ছোট্ট, অতি ক্ষুদ্র কঁাটা ফুটিয়াছে। বাহির হইতে দেখা যায় না, বড় ভিতরে প্রবেশ করিয়া সর্বদা খচখচ করিতেছে-এক বিন্দুও সুখ পাই না ; তুমি তুলিয়া দিতে পরিবে ? లి