পাতা:অভাগীর স্বর্গ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দুরদৃষ্টির এক বিন্দুও তাহার মনে উদয় হয় নাই। লিও তাহার বশ্যতা স্বীকার করিবে, কেননা সবাই করিয়াছে । এতদিন যে করিতেছিল না সে কেবল তাহার মূখ্যতার ফল। মেরি উপায়সিদ্ধির জাল বুনিতেছিল, কিন্তু এতদিন তাহ পারিয়া উঠে নাই,-এক দিক বুনিতে অন্য দিকের সূতা ছিড়িয়া যাইতে ছিল । কিন্তু এতদিনে দুই দিকে বেশ শক্ত করিয়া বঁাধিয়া চমৎকার জাল তৈয়ার হইয়াছে, এবার শিকার ধরা পড়বেই। কতকটা হস্ৰষ্টচিত্তে মেরি নামিয়া আসিল । বসিবার কক্ষে লিও দাড়াইয়াছিল। আসিয়াই দেখিল তাহার হাতে একতাড়া নোট রহিয়াছে, মেরি কাঠের মত হইয়া গেল । লিও হাসিয়া হস্তগ্রহণ করিল। মেরি মুখ অবনত করিল। মনে হইল হাত বুঝি বড় উষ্ণ, আর এ হাসি বুঝি উপহার দিবার জন্য কাহারে নিকট চাহিয়া আনিয়াছে । লিও কহিল, “টাকা নাও । আজ সাত দিনের শেষ দিন।” মেরি হাত পাতিল । লিও একে একে নোটের তাড়া গুনিয়া দিয়া বলিল, “হইয়াছে ? মেরি পূর্বের মত মাথা নাড়িয়া Bond ফিরাইয়া দিল। একমুহুর্তে তাহার সমুদয় কৌশল, আশা, ভরসা সমস্ত ফাটিয়া গিয়াছে-ভিতরের হৃৎপিণ্ডও ফাটিবার উপক্রম করিতেছে, শরীরের সমস্ত শক্তি একত্রিত করিয়া এ সময়ে সে প্রাণপণে সচেতন রহিল ; এ সময়ে অচেতন হইল। bब्लिद ब्i ! লিও কহিল, “আজ বোধ হয় এই শেষ । শেষ সময়ে তোমাকে দুটো কথা বলিতে চাই, শুনিবে কি ?” মেরি মাথা নাডিয়া বলিল, “শুনিব ।” “তবে এ কথাটি রাখিও । কাহাকেও সৎ দেখিয়া শীঘ্র বিবাহ করিও ; তোমার অর্থ আছে--অর্থের জন্য ভাবিও না ; শুধু সৎ এবং উচ্চ দেখিয়া কাহাকে বিবাহ করিয়া সুখী হইয়ো -এরূপ ধনসম্পত্তি লইয়া অরক্ষিতা অবস্থায় বেশি দিন থাকিয়া না ।” মেরি একটিবার মাত্র মুখ তুলিয়া লিওর মুখপানে চাহিয়া অবনত হইল ।