পাতা:অভিযাত্রিক - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S38 অভিযান্ত্রিক অতি-বৃহৎ বৃক্ষ দেখেচি। নাম যদিও ‘বুদ্ধ নারিকেল”-এগাছের চেহারা দেখতে অনেকটা বিড়িপাতার গাছের মতো-প্রকাণ্ড মোটা গুড়ি, ভীষণ, উচু, সোজা খাড়া ঠেলে উঠেচে আকাশের দিকে, চওড়া বড় বড় অনেকটা তিত্তিরাজ গাছের মতো পাতা-পত্রসমাবেশ অত্যন্ত ঘন । বনস্পতিই বটে, এর পাশে শাল গাছকে মনে হয় বেঁটে বন্ধু । অবিশিষ্ঠ ও জঙ্গলে কি ভাবে এ গাছের নাম জানলুম তা পরে বলবো । কিছুক্ষণ পরে হেমেন ফিরে এসে আনন্দের সঙ্গে বললে-খুব ভালো স্নানের জায়গা আবিষ্কার করে এলুম, বেশ একটা গভীর ডোবার মতে 5८--- আমি জিনিসপত্র নিয়ে যেতে চাইলুম। হেমেন বললে-এইখানে থাক না পড়ে, তুমিও যেমন, কে নেবে এই জঙ্গলে ? আমি বললুম-থাক । তবে খাবারের পুটুলিটা নিয়ে যাওয়া যাক, নেয়ে উঠে। সেখানে বসেই খেয়ে নেবো । পরে দেখা গেল এ প্রস্তাব করে। কি ভালোই করেছিলাম ! ভাগ্যে খাবারের পুটুলি রেখে যাইনি ! গিয়ে দেখি বনের মধ্যে আসলে পাহাড়ী ঝরনাটাই একটা খাতের মতে, অনুষ্টি করেচে। একটা মানুষের গলা পর্যন্ত জল ডোবাটাতে । মান সেরে শালবনের ছায়ায় বসেই আমরা জামালপুর থেকে কেন । পুরী ও জিলিপি খেলাম, তারপর ঝরনার জল থেয়ে নিয়ে আমরা আগের সেই শালবনের তলায় ফিরে এসে দেখি, হেমেন যে ছোট সুটকেসটি ফেলে গিয়েছিল, সেটি নেই । এই জনহীন বনে সুটকেস চুরি করবে কে ? কিন্তু করেচে। তো দেখা যাচে । সুতরাং মানুষ নিশ্চয়ই এখানে কোথাও আছে । আমরা সে দলের লোক নই, যে দলের একজন চিড়িয়াখানায় জিরাফ দেখে বলেছিলঅসম্ভব। এমন ধরনের জানোয়ার হতেই পারে না ! এ আমি বিশ্বাস করিনে ।