পাতা:অভিযাত্রিক - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অভিন্ধাজিক R

    • মার দুধায়ে নির্জন, নিঃশব্দ শিলাখণ্ড-ছাড়ানো প্রাম্ভীর, প্রাস্তরের মাঝে মাঞ্চৈ শাল-পলাশের বন । পথ কখনো নিচে নামচে কখনো শুপরে উঠেচে । গাড়োয়ান নীরবে গাডি চালাচ্চে, দু একবার কি বলেছিল। কিন্তু তার দেহাতী উড়িয়া বুলি আমি কিছুই বুঝলুম না। অগত্যা সে চুপ করে আপন মনে গাড়ি চালিয়ে চলেচে ।

সুতরাং এই জ্যোৎস্নালোকিত পাহাড়ে, অরণ্যে ও প্রাস্তয়ে আমি যেন একা । জ্যোৎসু ফুটলে শালবনের রূপ যেন বদলে গেল, পাহাডশ্রেণী রহস্যময় হয়ে উঠলো । অনেকদিন কলকাতা শহরে বদ্ধ জীবন-যাপনের পরে, এই রোদপোড়া মাটির ভরপুর গন্ধ আমাকে আমার উত্তরবিহারে - যাপিত অরণ্যবাসের দিনগুলির কথা মনে করিয়ে দিয়ে এই রাত্রি, এই জ্যোৎস্নালোককে আর ও মধুময় করে তুলেচে । দুটো তারা উঠেচে বা দিকের পাহাড-শ্রেণীর মাথায় । বৃহস্পতি ও শুক্র । পার্ক সার্কাসে টুইশানি করতে যাবার সময় রোজ দেখতুম তারা দুটো বভি বড বাডির মাথার ওপর উঠচে । সেদিনও দেখে এসেচি ; চোখ :"জে কল্পনা করবার চেষ্টা করলুম কোথায় পার্ক সার্কাসের সেই তেতিলা ; বাড়িটা, সেই ট্ৰাম লাইন-আর কোথায় এই মুক্ত প্রান্তর, জ্যোৎস্না-ওঠা বনভূমি, ঝরনা, বঁাশবন, পাহাড়শ্রেণী ! • • • কোনো দিকে কোনো শব্দ নেই। এক যেন আমি এই সৌন্দর্যলোকের অধিবাসী । মন এ সব স্থানে অন্য রকম হয়ে যায়। প্রত্যেকের উচিত গভীর নির্জন স্থানে মাঝে মাঝে বাস করা । মন অন্যরকম কথা কয় এই সব জায়গায় । মনের গভীরতম দেশে কি কথা লুৱে পানো আছে, তা বুঝতে হ’লে নির্জনতার দরকার। ভারতবর্ষের রূপও যেন ভালো করে চেনা গেল। আজ । বাংলার সমতল ভূমিতে বাস করে আমরা iারতের ভূমিশ্রীর প্রকৃত রূপটি ধরতে পারি না । অথচ এই রাস্তু, মাটি, ****াড়, শালবন-এখান থেকে আরম্ভ করে সমগ্র মধ্যভারতের এই রূপ । খড়গপুর ছাডিয়েই আরম্ভ হয়েচে রাঙা মাটি, পাহাড় আর শালবন