পাতা:অভিযাত্রিক - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

te অভিযান্ত্রিক পথে পথে অনেকদিন বেড়িয়ে এই ব্যাপারটি আমি লক্ষ্য করেচি, মন যেখানে এতটুকু আশ্রয় পায় সেইখানেই তার আঁকড়ে ধরে থাকবার কেমন একটা আগ্রহ গড়ে ওঠে। সে আশ্রয় যখন চলে যায়, তখন মন আশ্রয়াস্তরে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে যেতে পারে অত্যন্ত সহজে ও অবলীলাক্রমে । একটা ছবি আমার এই সম্পর্কে বহুদিন মনে ছিল । যখন চাটগা আসচি স্টীমারে, দূর থেকে দেখতে পেলাম কর্ণফুলির মোহানার বাইরে সমুদ্রের মধ্যে একখানা বড় পালতোলা জাহাজ নোঙর করা আছে। নীল সমুদ্রের মধ্যে বহুদূর থেকে জাহাজখানা দেখাচ্চে যেন একটি দ্বীপের মতো, যেন অকুল সমুদ্রের কুলে দুঃখসুখবিজড়িত একটি ক্ষুদ্র গৃহকোণ, তার সাদা ভাজ করা গোটানো পালগুলো, লম্বা লম্বা মাস্তুলগুলো আর মন্ত বড় কালো খোলটা আমার মনে বহুদিন স্থায়ী রেখাপাত করেছিল । চাটগাঁয়ে ওদের বাডি অ্যাসিতে ওরা আমাকে সাগ্রত অভ্যর্থনা করলেমুলী বঁাশে ছাওয়া সেই ছোট ঘরটাতে আবার বিছানা পেতে দিলে । ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের জন্যে মংড় থেকে বৰ্মিজ পুতুল ও খেলনা এনেছিলুম। --তারা সেগুলো পেয়ে খুব খুশি । একদিন বাড়ির কর্তা বললেন, চলুন সীতাকুণ্ডু যাবেন ? আপনি তো চন্দ্রনাথ যাননি, আমনি চন্দ্রনাথ ঘুরে আসবেন, এ অঞ্চলে এসে চন্দ্রনাথ না দেখলে বাডি ফিরে লোককে বলবেন কি ! পরদিন সকালের ট্রেনে দুজনে গিয়ে নাম লুম সীতাকুণ্ড । বরিশাল থেকে চট্টগ্রাম আসবার পথে একদিন এই চন্দ্রনাথ পাহাড়কে দূর থেকে দেখেছিলুম, তখন মনে ভেবেছিলুম চাটগাঁ, পৌঁছেই আগে চন্দ্রনাথ দেখতে হবে । অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় তা আর তখন হয়ে ওঠেনি । আজ দেরাং আর আরাকান ইয়োমা পর্বত-শ্রেণী ও অরণ্যভূমি বেড়িয়ে