পাতা:অরক্ষণীয়া - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তিন ছাটভাই অনাথিনাথকে বাধ্য হইয়া প্রাঙ্গণের প্রাচীরে একটা দ্বার ফুটাইতে হইল। আগ্রজের শ্রাদ্ধ-শান্তি হইয়া গেলে পািনর-ঘোল দিন পরে, একদিন তিনি অফিসে যাইবার মুখে চৌকাঠের উপর দাড়াইয়া পান চিবাইতে চিবাইতে বলিলেন, আর না বললে তা নয় বৌঠান, বুঝতে তো সবই পার-খেতে তোমাকে একবেলা এক মুঠো দিতে আমি কাতর নই। -- তা দাদা আমার সঙ্গে যতই কেন না। কুব্যবহার করে যান । কিন্তু আত-বড় মেয়ের বিয়ের ভার ত আমি সত্যি সত্যি নিতে পারিনে । শুনতেই আমার দেড়-শ টাকা মাইনে, কিন্তু ক{চ্চা-বাচ্চ ত কম নয় । তাই আমি বলি কি, মেয়ে নিয়ে এ-সময়ে তোমার একবার হরিপালে যাওয়া উচিত । দুর্গামণি রান্নাঘরের একটা খুটি আশ্রয় করিয়া কোনমতে দাড়াইয়া ছিলেন ; সভয়ে সসঙ্কোচে কহিলেন, দাদার অবস্থা ত তুমি জান ঠাকুরপো । কিছু নেই তঁার। এত বড় বিপদের কথা শুনে একবার দেখা পর্যন্ত দিতে এলেন না । তা ছাড়া, না নিয়ে গেলেই বা যাই কি করে ? বড়বেী স্বর্ণমঞ্জরী দেবরের পার্শ্বে প্রাচীরের আড়ালেই ছিলেন ; একটুখানি গলা বাড়াইয়া কহিলেন, দাদার অবস্থা ভাল নয় জানি, কিন্তু তোমার দেওরািটই কোন লাটসাহেব মেজবেী, আর ঐ শুনতেই দেড়-শ’ । কিন্তু যা করে আমি সংসার চালাই, তা আমি তা জানি । আর তাও বলি-অত-বড় ধুমসে মেয়ে তোমার ঘাড়ে-কে তোমাকে যেচে ঠাই দিতে যাবে বল দিকি ? কিন্তু তা বলে মান-অভিমান করে বসে থাকলে তা চলে না ।