পাতা:অরক্ষণীয়া - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অরক্ষণীয়া 8 কিন্তু অতুলের মুখ কালো হইয়া উঠিল। ছোটবৌয়ের কথার তাৎপর্য স্বর্ণনা বুঝিলেও সে বুঝিয়াছিল। তাই খানিকক্ষণ স্তব্ধ হইয়। বসিয়া থাকিয়া যখন সে উঠিয়া গেল, তখন মনে হইল। এই হোলির দিনে কে যেন তাহার জামায় কাপড়ে লাল রঙ এবং মুখে গাঢ় কালি লেপিয়া ছাড়িয়া দিয়াছে। আসল কথাটা এতদিন অপ্রকাশ ছিল বটে, কিন্তু আর রহিল না । পাড়ার হিতাকাক্তিক্ষণীদের কথায় অচিরেই দুর্গার কানে গেল যে, এই বাড়িতেই অতুল আবদ্ধ হইয়াছে। অনাথেরই বড় মেয়ে মাধুরীর সঙ্গে তাহার বিবাহ স্থির হইয়াছে। ঘটকালি স্বর্ণ করিয়াছেন এবং মেয়ে দেখিয়া অতুলের ভারি পছন্দ হইয়াছে। অ্যাট মাধুরী শিশুকাল হইতেই কলিকাতায় মামার বাড়ি থাকে। মহাকালী পাঠশালায় পড়ে । ইংরাজী, বাংলা, সংস্কৃত শিখিয়াছে। গাহিতে, বাজাইতে, কার্পেট বুনতেও জানে; আবার শিব গড়িতে, স্তোত্র আওড়াইতেও পারে। দেখিতেও অতিশয় সুশ্রী । এবার পূজার সময় মাস-দুয়ের জন্য বাটী আসিয়াছিল ; সেই সময়েই কথাবার্তা পাকা হইয়া গিয়াছে। অতুলৰ মত দুর্লভ পাত্র চেষ্টা করিয়া সংগ্রহ করিতে হয় নাই, পাত্র আপনিই ধরা দিয়াছে। অবশ্য স্বর্ণ মাঝখানে ছিলেন । ছোটবৌয়ের ভাইয়ের অবস্থাপন্ন। মা বঁচিয়া আছেন, আসন্নপ্রসবা মেয়েকে তিনি বাড়ি লইয়া যাইবার জন্য লোক পাঠাইলেন, সঙ্গে মাধুরীও আসিল। মেজজ্যাঠাইকে সে অনেকদিন দেখে নাই, আসিয়াই প্রণাম করিতে আসিল ।