পাতা:অরক্ষণীয়া - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অরক্ষণীয়া १४ তাহার চােখের দৃষ্টি চিতার পিঙ্গল ধূসর ধূমের তরঙ্গিত যবনিকা ভেদ করিয়া চলিয়া গেল। মনে পড়িল, সেদিন যে মরিতে দেয় নাই-সে। ওই, ওই যে জাহ্নবীর ঘোলা জলে অস্পষ্ট ছায়া ফেলিয়া মূর্তিমতী শোকের মত বসিয়া আছে,-শুধু রুক্ষকেশ ও মলিন অঞ্চল যাহার বাতাসে দুলিতেছে। তাহার দুই চক্ষু অশ্রুপূর্ণ হইয়া উঠিল। মনে মনে বলিল, ছাই রূপ! রূপেরই যদি এত দাম, তবে তিন বৎসর পূর্বে রূপের হাটে সে নিজেই ত দেউলিয়া হইয়া গিয়াছিল। সেদিন পরমাত্মায়েরাও ত ঘূণায় তাহার পানে চাহিতে পারে নাই । কেমন করিয়া যে সময় কাটিতেছিল, তাহার জ্ঞান ছিল না। কখন যে চিতা নিভিতেছিল, তাহাও সে দেখে নাই। সৰ্বক্ষণ তাহার সমস্ত দৃষ্টি শুধু ওই নিশ্চল মূর্তিটার প্রতি নিবদ্ধ হইয়া ছিল। অনাথ কহিলেন, আর বসে কেন বাবা ? এসো, শেষ কাজটা শেষ कएद्र छेि । চলুন, বসিয়া অতুল অপরাহু বেলায় স্বপ্ন ভাঙ্গিয়া উঠিয়া দাড়াইল । তখন সূর্য ঢলিয়া পড়িতেছিল । সেই মান আলোকে দীপ্যমান ঘাটের উপর নিপতিত দু’গাছি ভাঙা চুড়ির উপর দৃষ্টি পড়ায় সে স্তব্ধ হইয়া দাড়াইল। এ সেই তাঁহারই দেওয়া অতি তুচ্ছ মহামূল্য অলঙ্কার। শত লাঞ্ছনা, সহস্ৰ ধিক্কারেও যে দু’গাছির মায়া জ্ঞানদা কাটাইতে পারে নাই, আজ নিজের হাতে ভাঙ্গিয়া ফেলিয়া তাহার কৈফিয়ত দিয়াছে। অতুল দ্রুতপদে অগ্রসর হইয়া আসিয়া সেই দু’গাছি সস্নেহে, সযত্নে কুড়াইয়া লইল! অখণ্ড অবস্থায় যাহার কোন মর্যাদাই সে দেয় নাই, আজ তাহা ভগ্নতুচ্ছ কাচখণ্ড হইয়াওতাহার কাছে একেবারে অমূল্য হইয়া উঠিল। পিছনে পদধ্বনি শুনিয়া জ্ঞানদা মুখ ফিরাইয়া চাহিল। সে চাহনি অতুল সহা করিতে পারিল না। বোধ করি বা একবার সে যেন তাহার হাত ধরিতেও গেল, কিন্তু আত্মসংবরণ করিয়া বলিল,-ভুল। সকলেরই হয়, জ্ঞানদা, কিন্তু-, বলিয়া সে হাতের মুঠাটা মেলিয়া ধরিতেই