সংবাদ পড়ে বারাসতের কাজিপাড়ার ইরাতী পল্লির বাসিন্দাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অনেকেরই বক্তব্য, ভদ্রলোক পাড়ার কারও সঙ্গে মিশতেন না কিন্তু পাড়ার সমস্ত অনুষ্ঠানে পয়সাকড়ি দিয়ে সাহায্য করতেন। এছাড়াও দিনরাত তাঁর বাড়িতে বড় বড় লাল বাতিওয়ালা গাড়ির যাতায়াতের ফলে কেউ ঘাঁটাতে সাহস পেতেন না। প্রদীপকুমার বিশ্বাস নামে তিনি যে ১৫ বছর আগে একটি হলুদ পত্রিকা প্রকাশ করতেন তাও অনেকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। তবে পাড়ার সবাই জানতেন সত্যানন্দ আচার্য বিয়ে করেছেন গায়ক নচিকেতার দিদি অলকানন্দাকে। তবে ক’টি বিয়ে করেছেন এ ব্যাপারে সঠিকভাবে কেউই মুখ খুলতে চাননি।
টাকি রোডে রাস্তার পাশে বিশাল এলাকা নিয়ে কোটি টাকা খরচ করে যে এয়ারক্র্যাফ্ট ইঞ্জিনিয়ারিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করছেন সেখানেও এলাকার কেউ চাকরির দাবি নিয়ে ভয়ে এগিয়ে আসেননি। ভয়ের অন্যতম কারণ স্থানীয় বেশ কয়েকজন মাসলম্যান নিয়ে সত্যানন্দ আচার্য সব সময় পরিবৃত হয়ে থাকেন। নতুন কেউ জ্যোতিষীর চেম্বারে গেলেই হাজির হয়ে যায় ৮/১০ জন তাগড়াই যুবক। বারাসাতের তাবড় তাবড় রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গেও ছিল তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। পুলিশের বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্তাও নাকি তার কাছে আসতেন জ্যোতিষ গণনার জন্য।
সব মিলিয়ে তাঁকে ঘিরে পাড়ায় একটা অদ্ভুত ভয়মিশ্রিত ধারণা তৈরি হয়েছিল। সত্যানন্দ আচার্য বারাসতের যে বাড়িতে থাকেন সেই বাড়িটির প্রায় প্রতিটি ঘরেই রয়েছে একাধিক কম্পিউটার। নিজে একটি জ্যোতিষশাস্ত্রের উপর ম্যাগাজিনও প্রকাশ করে থাকেন নিয়মিত। বারাসতের মতো জায়গায় হঠাৎ এয়ারক্রাফট্ ইঞ্জিনিয়ারিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কেন করতে গেলেন জিজ্ঞাসা করতে সত্যানন্দর চটজলদি জবাব, “আমি চাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এমন কিছু করতে যা চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে। আমাদের রাজ্যে এখনও পর্যন্ত এমন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হয়নি যা আমি তৈরি করতে চলেছি। আর এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের দায়িত্ব দিয়েছি স্বাস্থ্য অধিকর্তা প্রভাকর চট্টোপাধ্যায়ের ভাইঝি ক্যাপ্টেন শতাব্দী চট্টোপাধ্যায়ের উপর।”
জ্যোতিষ গণনা করে সত্যানন্দ জন প্রতি পারিশ্রমিক নেন ৩০০ টাকা। দিনে প্রায় ৫০ জনের মতো লোক আসেন ভাগ্য গণনা করতে। এছাড়াও সত্যানন্দর আয় পাথর বিক্রি কিংবা বিভিন্ন রকম উপদেশের পথ ধরেও। সত্যানন্দর কথায়, আয়ের পুরোটাই তাঁর আইন মেনে। কেননা পশ্চিমবঙ্গে তিনিই একমাত্র জ্যোতিষী যিনি নিয়মিত বৃত্তিকর দিয়ে থাকেন। আর ব্যবসা করার জন্য বারাসতের বামপন্থী পুরবোর্ড থেকে জ্যোতিষ গণনার জন্য ট্রেড লাইসেন্সও নিয়েছেন। ফলে জ্যোতিষ গণনাকে তিনি বৈধ বলেই মনে করেন। তবে পুলিশের বিরুদ্ধে তাঁর ক্ষোভ, পুলিশ তাঁর চেম্বারে হামলার অভিযোগ নিজে চোখে দেখে অভিযোগ নেওয়ার পরেও কোনও ব্যবস্থা নিল না। উল্টে যারা আক্রমণ করল তাদের অভিযোগের উপর ভিত্তি করে আমাকে গ্রেপ্তার করল। এটাকে আমি মনে করি হিন্দু ধর্মের উপর একটা পরিকল্পিত আঘাত।