পাতা:অলৌকিক নয়, লৌকিক (দ্বিতীয় খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অলৌকিক নয়, লৌকিক ২
১৯

 সাম্প্রদায়িক ঐতিহাসিকরা এমন ইতিহাসই রচনা করেছেন যা পড়ে মনে হওয়াটা স্বাভাবিক ভারতের সমস্ত কিছু গৌরবের কৃতিত্ব হিন্দুদের, যা কিছু অগৌরবের তার সমস্ত কিছুর দায়ই মুসলমানদের। দেশের এই শিক্ষা পরিবেশের মধ্যে মানুষ হয়ে সাধারণভাবে মানুষ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষই পোষণ করেছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বৈষম্যমূলক আচরণ পেয়ে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের প্রতি সন্দেহই পোষণ করছে। ফলে একই দেশে বাস করেও সংখ্যাগুরুদের অবিশ্বাস ও পক্ষপাত সংখ্যালঘুদের ভারতকে আপন দেশ ভাবার সুযোগ দিচ্ছে না। বরং ভ্রাতৃঘাতী রক্তক্ষয়ের মধ্য দিয়ে মৌলবাদী পরিবেশই আরও বেশি করে জাঁকিয়ে বসছে।

ঐতিহাসিকরা গোষ্ঠীস্বার্থে যে ইতিহাস রচনা করেছেন তা হিন্দু জাতীয়তাবাদকেই পুষ্ট করেছে। দ্বিজাতিতত্ত্বের বিষবৃক্ষের বীজ কৈশোরেই ইতিহাস পাঠকদের মাথায় বপন করা হয়েছে, তারই ফলশ্রুতিতে সাম্প্রদায়িক রেষারেষি, রক্তপাত, লুণ্ঠন, হত্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধিলাভ করেই চলেছে।

 যুক্তিবাদীদের কাছে কোন যুক্তি গ্রহণীয় হবে? নিশ্চয়ই এমন কোনও যুক্তি গ্রহণীয় হবে না যা সাম্প্রদায়িক, শুধুমাত্র গোষ্ঠিস্বার্থে চূড়ান্ত মিথ্যাচারিতা। যুক্তিবাদীরা পরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ ও প্রত্যক্ষ-অনুগামী জ্ঞানের সাহায্যে সিদ্ধান্তে পৌঁছায়। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে কোনও গোষ্ঠীস্বার্থকে সমর্থনের প্রশ্নই যদি বিশাল বড় হয়ে ওঠে, তবে আমরা দ্বিধাহীনভাবে শোষিতদের স্বার্থকেই নিজ স্বার্থ জ্ঞান করব। কারণ, যুক্তিবাদীরা মানবিকতার বিকাশকামী, যুক্তিবাদীরা দেশপ্রেমী। যুক্তিবাদীদের ধারণায় ‘দেশ’ বলতে মাটি নয়, দেশ বলতে ভূখণ্ডের মানুষগুলো। ভূখণ্ডের সংখ্যাগুরু মানুষদের প্রতি অকৃত্রিম প্রেমই দেশপ্রেম। মরা চাই ধারণ মানুষের মধ্যে যুক্তিবাদী মানসিকতা গড়ে তুলতে। যার পরিণতিতে তাঁরা যুক্তি দিয়ে বিচার করে শুধুমাত্র তারপরই কোনও কিছুকে গ্রহণ করবেন অথবা বর্জন করবেন। যুক্তিবাদী চিন্তাই তাঁদের বুঝিয়ে দেবে তাঁদের প্রতিটি বঞ্চনার কারণ সমাজ ব্যবস্থার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

 এই মুহূর্তে প্লেটোর একটা কথা বড় বেশি মনে পড়ছে।