সাঁওতাল সমাজ যাদের ‘জানগুরু’ বলে বিভিন্ন আদিবাসী অধ্যুষিত জেলায় তারাই এ সব নামে পরিচিত) ও অবতারদের বিষয়ে খবর নিই—তারা কী কী ধরনের অলৌকিক ক্ষমতার (?) অধিকারী। অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালানো হয়। ফলে আশপাশের গাঁয়ের মানুষ নানা অলৌকিক ঘটনা দেখার উৎসাহে হাজির হন। স্থানীয় অলৌকিক ক্ষমতাবানদের এতদিন ধরে ঘটানো ঘটনাগুলোই আমাদের সমিতির সভ্যরা অনুষ্ঠানে ঘটিয়ে দেখাচ্ছেন। ঘটনাগুলো দেখবার পর বোঝাচ্ছেন—এগুলো কোনও অলৌকিক ঘটনা নয়, কৌশলে ঘটাচ্ছি। আপনারাও যে কেউ চেষ্টা করলেই করলেই এমনটা ঘটাতে পারবেন, তারপর দর্শকদের দিয়েও ঘটনাগুলো ঘটানো হতে থাকে। উৎসাহী গ্রামবাসীরা হুড়মুড় করে এগিয়ে আসতে থাকেন। এবং অদ্ভুত সব ঘটনা হাতে-কলমে করার কৌতূহলে, আনন্দে, এতদিনের দেখা জানগুরুদের ঘটানো ঘটনাগুলো যে ওঁরাও ঘটাতে পারেন, এই প্রত্যয় বহুর মধ্যে সংক্রামিত হয়। আমরা ঘোষণা করি—আপনারা তো কৌশলগুলো জেনে গেলেন, এবার জানগুরুদের এইসব কৌশল গ্রহণের সুযোগ বন্ধ করে দিন, দেখতে পাবেন ওদের সব জারিজুরি বন্ধ হয়ে যাবে। এগুলো ঘটানোর কৌশলগুলো আপনারা জানতেন না, ওরা জানত। সেই কৌশল দিয়ে এতদিন আপনাদের ঠকিয়ে টাকা-পয়সা রোজগার করেছে, টোটকা ওষুধে অসুখ সারাতে না পারলে নিজের দোষ ঢাকতে আপনাদেরই কারো পরিবারের নিরীহ মেয়েদের ডাইনি বলে ঘোষণা করেছে। ওরা যা করে সব কৌশলেই করে, অলৌকিক ক্ষমতায় নয়।
আরো একটা কাজও আমরা করি। অনুষ্ঠানের কয়েকদিন আগেই অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তারা প্রকাশ্যে এবং ব্যাপক প্রচার চালিয়েই স্থানীয় অলৌকিক ক্ষমতার দাবিদারদের অলৌকিক ক্ষমতা প্রমাণের জন্য সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আসেন। চ্যালেঞ্জের জবাবে কেউ হাজির হলে তাঁরা প্রতিটি ক্ষেত্রেই অবশ্যই পরাজিত হন। হাজির না হলে গ্রামবাসীদের উপর তাঁদের প্রভাব প্রচণ্ড কমে যায়। ওঝা, জানগুরু, সখাজাতীয় অলৌকিক ক্ষমতার দাবিদারদের বুজরুকি বন্ধ হলে ডাইনি চিহ্নিত করার কাজও বন্ধ হয়, কারণ এঁরাও ডাইনি চিহ্নিত করেন। অবশ্য এরই পাশাপশি আরো বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করার আশু প্রয়োজন রয়েছে। আমরা আমাদের সীমিত ক্ষমতায় কিছু কিছু পর্যায়ে কাজও করছি।
বিভিন্ন জানগুরুর ক্ষমতার কৌশল নিয়ে পরে আলোচনা করব। এবং এই