ততক্ষণ তাদের ক্ষমতাও কাজ করে।
দ্বিতীয় মতটি সমাজের মানুষদের প্রভাবিত করে বলেই ভীত মানুষগুলো রোগ থেকে নিজে বাঁচতে বা আত্মীয়কে বাঁচাতে জানগুরু যাকে ডাইনি বলে ঘোষণা করে তাকে অতি নিষ্ঠুরতার সঙ্গে হত্যা করতে সামান্যতম কুণ্ঠিত হয় না। বরং অনেক সময় হত্যাকারীরা মনে করেন, ডাইনি হত্যা করে সমাজের উপকারই করেছেন, ভবিষ্যতে কাউকে ডাইনির নিষ্ঠুরতার বলি হতে হবে না। এ ধরনের ঘটনাও বহু ঘটেছে, ডাইনি হত্যাকরী নিজেই বীরের মত থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন।
সমাজ অবশ্য সাধারণভাবে বিশ্বাস করে, ডাইনি ইচ্ছে করলে তার মন্ত্র ফিরিয়ে নিতে পারে।
ধর্ম
সাঁওতাল সমাজের কাছে সিং বোঙ্গার (সূর্যের) স্থান সবচেয়ে উঁচুতে। সিং বোঙ্গা রোজ পূর্ব দিকে দেখা দেন বলে সমাজের কাছে পূর্ব দিক পবিত্র দিক। পুজো-পাঠ হয় পূর্ব দিকে মুখ করে। নির্দিষ্ট সময় মেনে সিং বোঙ্গার পুজো হয় না। সিং বোঙ্গার করুণা পেতে পাঁচ-সাত-দশ বছরে একবার পুজো দিলেই হলো। পুজোতে সাদা মোরগ অথবা পাঁঠা বলি চড়ান হয়। ‘মারাং বুরু’ (আক্ষরিক অর্থে বড় পাহাড়) বোঙ্গাদের মধ্যে অন্যতম প্রধান মারাং বুরু জাতির ও সমাজের পালনকর্তা। ইনিই আদিম মানব-মানবীকে পালন করেছিলেন, খাওয়া-পরার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। শিখিয়েছিলেন হাঁড়িয়া তৈরির পদ্ধতি!
শুরুতে মারাং বুরুর পুজোয় দেওয়া হত হাঁড়িয়া বা বাড়িতে তৈরি মদ। পরবর্তীকালে মুণ্ডাদের প্রভাবে মারাং বুরুর কাছে বলি দেওয়া হতে থাকে। মারাং বুরু কোন কোন খুঁটের (উপগোষ্ঠীর) গৃহদেবতা। বীরহোর, ভূমিজ, হো বা মুণ্ডাদের কাছেও পুজিত হন মারাং বুরু।
‘জাহের-এরা’ জাহের থানের (পবিত্র কুণ্ড্র, যেখানে সমাজের সার্বজনীন দেবতারা অবস্থান করেন) অধিষ্ঠাত্রী দেবী। অনেকের ধারণা। জাহের-এরাকে মুণ্ডারা জাহের বুড়ি বলেন, ওরাওঁরা জাহের এরাকে বলেন ঝাকড়া বুঢ়িয়া বা সরণা বুঢ়িয়া। ফাগুয়া বা দোলের দিন জাহের এরার বিশেষ পুজো হয়। দেবীর কাছে প্রার্থনা করা হয় যেন গ্রামের ছেলেমেয়েরা সুস্থ থাকে, খারাপ বাতাস রোগ না করে আনে।