বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:অলৌকিক নয়, লৌকিক (দ্বিতীয় খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/২৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৯০
অলৌকিক নয় লৌকিক ২

সাধারণত এঁদের বলা হয় আগে বোঙ্গা। আগে বোঙ্গার পুজোর প্রসাদ মেয়েদের খাওয়ার বা ছোঁয়ার অধিকার নেই। প্রসাদে মেয়েদের ছোঁয়া লাগলে দ্বিগুণ নৈবেদ্য দিয়ে আগে বোঙ্গার পুজো দিয়ে প্রায়শ্চিত্ত করতে হয়।

 সমাজের বিশ্বাস আত্মা অমর। দেহত্যাগের পর যতদিন তাঁদের কথা বংশধররা মনে রাখেন ততদিন আত্মা বিপদে-আপদে তাঁদের সাহায্য করে। কেউ দেহত্যাগ করার পর বোঙ্গা হয়ে যান। পারলৌকিক কাজ শেষ হওয়ায় পর আত্মার বোঙ্গা সাঁওতালদের বাড়িতে স্থান পান। আত্মার এই বোঙ্গাকে বলে হপ্‌রামপো বোঙ্গা। প্রতি পরবে পরিবারের লোক হপ্‌রামপো বোঙ্গাকে নৈবেদ্য দেয়।


 ‘দিশম সেন্দ্রা’ বা বার্ষিক শিকার পরবের সময় সাঁওতাল সমাজ জঙ্গল মহাসভা বা লো বীর’ ডাকে। ‘লো বীর’-এর নির্দেশ সমাজের সকলেই মান্য করেন। ‘ডিহরি’ হলেন লো বীর পরবের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। ফাল্গুন মাসে বাহা পরবের পর 'লো সেন্দ্রা' অনুষ্ঠিত হয়। জিহরি শিকার পরবের দিন ঠিক করেন ও কোথায় কোথায় শিকারীরা রাত্রিবাস করবেন, তাও ঠিক করেন। বিভিন্ন হাটে দূত পাঠান ডিহরি। দূতদের হাতে থাকে ‘ধারওয়াক’ (পাতাসমেত শালগাছের ডাল)। হাটের লোকজন ‘ধারওয়াক’ হাতে কোনও লোক দেখলেই বুঝতে পারেন ডিহরির দূত এসেছেন। সমাজের লোকেরা দূতের কাছ থেকে জেনে নেন শিকারি পরবের দিনক্ষণ ও অন্যান্য খুঁটিনাটি।

 গ্রামের নাইকে পরবে যাওয়া শিকারীদের কল্যাণ কামনায় পাঁচটা মোরগ উৎসর্গ করে পুজো দেন ডিহরি, শিকার পরবের কয়েকদিন আগে থেকেই সহবাস বন্ধ রাখেন, শয্যা নেন ভূমিতে। শিকার পরবের আগে সন্ধ্যায় পিতলের পাত্রে জলে দুটি শাল-পল্লব রেখে দেন। পরদিন ওই পল্লব-দুটি তাজা থাকলে শুভ লক্ষণ বলে ধরে নেওয়া হয়, শিকারীরা আসার আগেই ডিহরি তাঁর স্নান সেরে ফেলেন। শিকারীরা হাজির হওয়ার পর ডিহরি বোঙ্গাদের পুজো করেন। বলি দেওয়া মোরগ চালের সঙ্গে রান্না করা হয়। এই খেয়ে ডিহরি তাঁর উপোস ভাঙেন। শিকারীরা বেরিয়ে পড়েন শিকারে।

 সারাদিন শিকার করার পর সন্ধ্যায় তাঁরা সমবেত হন। এক এক গ্রামের মানুষ এক এক জায়গায় বসেন। রাতের খাওয়া দাওয়ার পাঠ চুকতে যাঁরা ‘লো-বীর’ সভায় যাবে তারা ছাড়া সকলে মিলে নাচ-গান-বাজনা শুরু করবে।